সারা দেশ

বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর হিড়িক দুঃশ্চিন্তায় পোশাক শ্রমিকরা

বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর হিড়িক দুঃশ্চিন্তায় পোশাক শ্রমিকরা

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলতি ডিসেম্বর মাসেই ভাড়া বাড়ানোর হিড়িক পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক-শ্রমিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা বলছেন, গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন বাড়ানোর কথা শোনার পর থেকেই গাজীপুরের বাড়িওয়ালা স্বাভাবিকের চাইতেও অনেক বেশি পরিমাণে ভাড়া বাড়ানোর মৌখিক নোটিশ দিয়েছেন।শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের গুলি, স্থানীয় প্রভাবশালীরদের হুমকি, জেল-জুলুম সহ্য করে মালিকদের থেকে কিছুটা বেতন বাড়ানো হয়েছে।

এই সুযোগে শিল্প এলাকার বাড়িওয়ালারা পোশাক কর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে আরও কঠোর হচ্ছেন। তারাও বেতন-বৃদ্ধির কারণে বাড়ি-বাসার ভাড়াও বাড়াতে শুরু করেছেন।গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকার পোশাক কর্মী সুলতানা আক্তার সোনালী নিউজকে জানান, তিনি স্বামী-সন্তান আর ছোট ভাই নিয়ে থাকেন একটি হাফ বিল্ডিংয়ের বাসাতে। বিদ্যৎবিলসহ তাকে মাসে বাসাভাড়া গুণতে হয় চার হাজার টাকা। হঠাৎ করেই বাড়িওয়ালা জানুয়ারি থেকে ভাড়া বাড়ানো হবে বলে নোটিশ দিয়েছেন।

এখন যদি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বাড়ানো হয় তাহলে তার পক্ষে সেটা বহন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে বর্ধিত ভাড়ার হিসাব কীভাবে মেলাবেন সেটা নিয়েই এখন দুঃশ্চিন্তায় তিনি।কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন পোশাক শ্রমিক রাজন মিয়া। তিনি স্থানীয় একটি গার্মেন্টস কারখানার আয়রন ম্যান পদে চাকরি করেন। তিনি সোনালী নিউজকে বলেন, ‘যে বাসায় ভাড়া থাকেন বর্তমানে সেই বাসার ভাড়া বিদ্যুৎবিলসহ সাড়ে তিন হাজার টাকা। নতুন বছরে বাড়ানো হবে আরও ৫০০ টাকা।

এতে বিপাকে পড়েছেন তিনিও। জানান, নিজের বেতন বেড়েছে নমাকাওয়াস্তে মাঝখানে বাড়িওয়ালা লাভবান হচ্ছেন।গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির কারণে বাসাভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি গাজীপুর শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিতেও ওঠে এসেছে। এ নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর থেকে মহানগরের বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভা করছেন তাঁরা। হুটহাট বা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাসাভাড়া না বাড়ানোর জন্য বাড়ির মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে বাসার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা বাসার মালিকদের ভাড়া না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি। এর মধ্যেই অনেকেই বাসাভাড়া না বাড়ানোর অঙ্গীকার করছেন। যদি কোন বাড়িওয়ালা অযৌক্তিক ভাবে এবং অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি করে তাহলে সেটা যেন আমাদেরবে জানানো হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, কদিন আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। পরে বেতন কিছুটা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৭ নভেম্বর নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এতে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আগে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল আট হাজার টাকা। বেতন বৃদ্ধির খবরে বাড়ির মালিকেরা নতুন বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন হারে বাসাভাড়া বাড়াচ্ছেন। এতে চরম বিপাকে পড়েছে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলসহ দেশের সব পোশাক শিল্প এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক ভাড়াটিয়া বাসিন্দারা।