সারা দেশ

ফুটপাতে জমে উঠেছে রমরমা গরম কাপড়ের ব্যবসা

গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তা, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় সম্প্রতি সময়ে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। তাই শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে-সাথে এ শিল্পাঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কে পাশে ফুটপাতে বসা ভ্র্যমান দোকানে জমে উঠেছে রমরমা গরম কাপড়ের ব্যবসা। এ শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে গড়ে উঠা দোকান গুলোতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে হাজার-হাজার টাকার পোশাক। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক রাস্তার দুই পাশে অস্থায়ী দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে।

স্বল্প আয়ের মানুষ নিজেদের পছন্দমতো গরম কাপড় কিনতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। চাহিদামতো ক্রেতা পেয়ে বিক্রেতারাও খুশি। তবে এক্ষেত্রে ফুটপাতের দোকান গুলোতে সব চেয়ে বেশি মধ্যবিত্ব পরিবারের মানুষ জনদের ভিড় এবার চোখে পড়ার পড়ার দেখা যাচ্ছে।ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন গাজীপুর অঞ্চলে লাখ লাখ টাকার গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন ৩ লাখ, থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকার পোশাক বিক্রি হয়। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে দুই শতাধিক গরম কাপড়ের অস্থায়ী দোকান রয়েছে।

প্রতিটি দোকানে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকার পোশাক বিক্রি হয়। ওই এলাকার দোকানগুলোতেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।সরেজমিনে দেখাগেছে, মাওনা চৌরাস্তা, আনসার রোড, ১নং সিঅ্যান্ডবি, ২নং সিঅ্যান্ডবি, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, বাঘের বাজার, মেম্বারবাড়ি, ভবানীপুর, রাজেন্দ্রপুর, পোড়াবাড়ীসহ সালনা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ গরম পোশাক বিক্রয়ে দোকান বসেছে। এদিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমের দিকে চন্দ্রা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ফুটপাতেও অস্থায়ী গরম পোশাকের দোকান বসেছে।

অন্য দিকে চন্দনা চৌরাস্তার জয়দেবপুর সড়ক অভিমূখে ফুটপাতে ব্যাপক গরম কাপড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। প্রতি দিন বিকেল ৩ টা থেকে শুরু করে রাত ৮ টা পর্যন্ত এখানে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মূখরিত থাকে সড়ক পথ।এসব ফুটপাত গুলো ঘোরে জানাগেছে, গাজীপুর যেহেতু শিল্প কারখানা এলাকা। এ জন্য জনসাধারণের বসবাস অনেক বেশি। তাই এ শিল্পাঞ্চলে মধ্য বিত্তবান শ্রেণির মানুষেরা বাজারের দ্রব্য মূল্যের জাতা কল থেকে বাঁচতে এবং অল্প টাকায় ভাল মানের পোশাক কিনার জন্য ফুটপাতের দোকান গুলোতেই ভিড় করছে।

সোনালীনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে আসা মফিজুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, এখন দেশের যে অবস্থা হয়েছে। সব কিছু জিনিসপত্রের দামই হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগে দেখা গেছে,যাদের একটু উপার্জন কম ছিলো, তারা ফুটপাতের দোকান গুলোতে এসে পছন্দের মার্কেট করতেন। তিনি বলেন, বর্তমানে এখন শুধু নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাই নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও ফুটপাতের দোকান গুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমি একটা সময়ে মার্কেট থেকেই শীতের জামা কাপড় কিনতাম। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি হওয়ার এখন আর অর্থনৈতিক ভাবে পেরে উঠতে পারছিনা। এজন্য ফুটপাতেই মার্কেটের পণ্য গুলো কম দামে কিনতে চলে এসেছি। আসলেই এখানে মার্কেটের ১২০০ টাকার পণ্য ৫০০ টাকায় কিনতে পারছি।

ফুটপাতে যে সব দোকানদার ভাসমান ব্যবসা করছেন। তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের যে অবস্থা। অর্থাৎ প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এজন্য মধ্যবিত্ববান ও নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে মহাসড়কের পাশে বসা ফুটপাতের দোকান গুলো। তারা আরও বলেছেন,এখন কোন মার্কেটে গেলে শীতের জামা কাপড় ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকার নিচে কিনতে পারবেন না। অথচ ফুটপাতে একই ধরনের এবং মানের কাপড় ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে তিনশ থেকে চারশো টাকায়। আর তাই অর্থনৈতিক অভাবের তাড়নায় মানুষেরা এখন ফুটপাতের দোকান গুলোতেই বেশি জোঁকছে।

সোনালীনিউজের সঙ্গে আলাপকালে শফিউল আলম নামে এক দোকানদার জানান, আমরা সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করেই। প্রচুর পরিমাণে জামাকাপড় দোকানে উঠিয়েছি। কেননা এখন মার্কেট থেকে মধ্যবিত্ত পরিবার শীতের জামা কাপড় কিনতে পারবেন না। প্রতিটি কাপড়ের দাম দিগুণ বেড়েছে। তাই সাধারণ মানুষের পক্ষে মার্কিন থেকে জামা কাপড় কিনার দিন শেষ। তিনি বলেন, ভাল ভালো পরিবারের লোকজন ফুটপাতের দোকান গুলোতে চলে আসছে। এর এক মাত্র কারণ মানুষের উপার্জন বাড়েনি কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে এবং সেই সময়েরই ফুটপাতের দোকান গুলোতে মানুষের ভিড়ে আরও রমরমা ব্যবসা জমে উঠবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, পুরো গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের চান্দনা চৌরাস্তা,চন্দ্রা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর ও এর আশেপাশের এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোয় প্রতিদিন সর্বনিম্ন প্রায় ১০ হাজার টাকার গরম কাপড় বিক্রি হয়। পুলিশ প্রশাসন দোকানদের প্রতি যদি কোন হস্তক্ষেপ না করেন। তাহলে এ ব্যবসার প্রভাবে স্থানীয় অর্থনীতি আরও বেশি শক্তিশালী হবে।সংশ্লিষ্টদের মতে, ফুটপাতের দোকান গুলো যদি না থাকতো নিম্নবিত্তের মানুষের জন্য শীতের জামা কাপড় কিনতে পারা কঠিন সাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠতো।