আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের চার সপ্তাহ সামনে এল নতুন যে পাঁচ বাস্তবতা

ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে যত প্রতিবেদন, বর্ণনা কিংবা বিশ্লেষণ হয়েছে, তা থেকে প্রথমেই যে বিষয়টি বোঝা যায় সেটি হল- সেগুলোর কোনটিতেই পুরো কাহিনী উঠে আসেনি। আর কেবল তাই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে কী ঘটছে তা বের করতে যুদ্ধের ধূম্রজাল ভেঙে ভেতরে ঢোকাটাও কঠিন। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাতের নতুন চেহারা এখনও ফুটে ওঠেনি।

সব ঘটনা এখনও খুব দ্রুত ঘটে চলেছে। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা খুবই বাস্তব। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বাস্তবতা এর মধ্যেই কোথাও আছে; কিন্তু সেই বাস্তবতার চিত্র কী এবং তা কোন পথে গড়াবে সেটি নির্ভর করছে এ বছরের বাকী সময়টা এবং এরপর যুদ্ধ কোনদিকে যায় তার ওপর।চলমান এই যুদ্ধে কিছু বিষয় আছে যেটা আমরা জানি এবং কিছু বিষয় আছে যেটা আমরা জানি না। তালিকাটা এখনও সম্পূর্ণ নয়।

২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসনের সময় কিছু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডনাল্ড রামসফেল্ডকে ব্যঙ্গ করেছিল। কারণ, তিনি সেখানে ‘অজানা অজানার’ কথা বলছিলেন। কিন্তু বিশ্বের এই অংশে অন্য অনেক কিছুর মতোই এমন অজানা কিছুও আছে, আর সেগুলো যখন উদ্ভুত হবে তখন তা একটা বড় ফারাক গড়ে দিতে পারে।

একটা বিষয় নিশ্চিত, আর তা হল গাজায় হামাস ও তাদের অনুজ অংশীদার ইসলামিক জিহাদকে গুঁড়িয়ে দিতে যে সামরিক অভিযান চলছে তাতে ইসরায়েলিদের সমর্থন আছে।তাদের ক্ষোভের পেছনের কারণ হল, হামাসের সেই অতর্কিত নজিরবিহীন হামলা, যা কেড়ে নিয়েছে ১৪০০ মানুষের প্রাণ এবং হামাস যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হয়েছে ২৪০ জন।

বিবিসি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি ব্রাউন লেখেন, তিনি ইসরায়েলের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নোয়াম তিবনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তার কাছ থেকে শুনেছেন, কীভাবে তিবন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দিনে তার স্ত্রীকে নিয়ে গাজা সীমান্তের নাহাল ওজে শহরে গিয়েছিলেন।

তার মিশন ছিল তার ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও তাদের দুই কন্যাকে উদ্ধার করা, যারা হামাস যোদ্ধাদের হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিল। তিবন তাদের উদ্ধার করতে পেরেছেন।নোয়াম তিবন অবসর নিলেও ৬২ বছর বয়সে এখনও তিনি যথেষ্ট কর্মক্ষম। সেদিন তিনি একটি অ্যাসাল্ট রাইফেল এবং এক মৃত ইসরায়েলি সেনার হেলমেট নিয়ে একদল যোদ্ধা জড়ো করে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে শহরকে নিরাপদ করেন এবং তার পরিবারসহ আরও অনেকের জীবন বাঁচান।

এই জেনারেল কিছুটা পুরোনো-ধাঁচের এবং সোজাসাপ্টা কথা বলা একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “গাজা দুর্ভোগ পোহাবে…কোনও জাতিই এটি মেনে নেবে না যে, আপনার প্রতিবেশী এসে আপনাদের শিশু, নারী ও মানুষদের হত্যা করবে। যেভাবে আপনারা (ব্রিটিশ) ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুদের গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেটাই এখন আমাদেরকে গাজায় করতে হবে, কোনও মাফ নেই।

কিন্তু যেসব নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে তাদের কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত এমনটি ঘটছে। আমরা কঠিন প্রতিবেশীকে নিয়ে থাকি। টিকে থাকতে গেলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে। এছাড়া কোনও উপায় নেই।তার মতো একই ভাবাবেগের প্রতিধ্বনি করছেন আরেও অনেক ইসরায়েলি। তারও বলছেন, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু এটি ঘটছে হামাসের কৃতকর্মের কারণে।

দুই.

গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের হামলা ভয়াবহ রক্তপাত ঘটাচ্ছে সেটিও স্পষ্ট। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ফিলিস্তিনি মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী ও শিশু। আর পুরুষরা যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক আর কতজন হামাস বা ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধা সেটি স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলিরাও গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রলায়ের দেওয়া মৃতের সংখ্যার হিসাব বিশ্বাস করে না। কিন্তু অতীতের সংঘাতগুলোতে ফিলিস্তিনি হতাহতের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছিল তা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নির্ভুল বলেই গণ্য করে।

ভয়ানক একটি মাইলফলক খুব দ্রুতই সামনে আসছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ২১ মাস আগে ইউক্রেইনে রাশিয়ার পুরোদস্তুর সামরিক অভিযান শুরুর পর সেখানে প্রায় ৯,৭০০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে।

নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হয়ত কিছু হামাস যোদ্ধাও আছে। কিন্তু সেটি যদি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশও হয়, যার সম্ভাবনা খুবই কম, তারপরও দেখা যায়- রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেইনে যতজনকে হত্যা করছে, ইসরায়েল মাত্র একমাসেই ঠিক সেই পরিমাণ ফিলিস্তিনি হত্যা করার পথে রয়েছে।

(জাতিসংঘ বলছে, ইউক্রেইনের মৃতের সংখ্যার হিসাব অসম্পূর্ণ এবং বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশিই হবে। ওদিকে, গাজাতে মৃতের সংখ্যাও বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা আছে, কারণ অনেক ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে মনে ধারণা করা হচ্ছে।)

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় এত বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বা আহত হচ্ছে যে, এসব হামলা অসম এবং যুদ্ধাপরাধের সামিল বলেই তারা মনে করছে।

হামাসের হামলার একেবারে প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সামরিক শক্তি ব্যবহার করে গাজায় হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছিলেন যে, কাজটি করতে হবে ‘সঠিক পন্থায়’। যার মানে তিনি বুঝিয়েছেন, ইসরায়েলকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় যুদ্ধ আইন মেনে চলতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন তেল আবিব সফর করেছেন। সেখানে যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, “আমি যখন একটি ফিলিস্তিনি ছেলে বা মেয়ে শিশুকে ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে বের করতে দেখি, তখন আমি ততটাই মর্মাহত হই, যতটা আমি ইসরায়েলি বা অন্য কোথাও কোনও শিশুর ক্ষেত্রে অনুভব করি।

“আমি গত ৩০ বছরে ইসরায়েলের সব যুদ্ধের রিপোর্ট করেছি। কিন্তু কোনও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এভাবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে যুদ্ধ আইন মেনে চলতে বলেছে বলে আমার মনে পড়ে না। ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফরে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে তার বিশ্বাস, ইসরায়েল বাইডেনের পরামর্শ মানছে না।

তিন:

আরেকটি বিষয়ও আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছেন।

তবে তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মতো গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ঘটনায় মারাত্মক নিরাপত্তা বিপর্যয়ের ব্যর্থতার কোনও ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করেননি।

গত ২৯ অক্টোবর তার এক টুইট আলোচনার ঝড় তুলেছিল; যে টুইটে তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে নিরাপত্তায় ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। তবে পরে নেতানিয়াহু টুইটটি মুছে দেন এবং ক্ষমাও চান।

তিন ইসরায়েলি – যাদের একজন সাবেক শান্তি মধ্যস্থতাকারী, আরেকজন শিন বেতের (ইসরায়েলের দেশীয় নিরাপত্তা সংস্থা) সাবেক প্রধান এবং একজন প্রযুক্তি ব্যবসায়ী। তারা ফরেইন অ্যাফেয়ার্সে জার্নালে এক নিবন্ধে লেখেন, এ যুদ্ধের কোনওকিছুতে এবং আগামী দিনগুলোতে যা কিছু ঘটবে তাতে নেতানিয়াহুর জড়িত থাকা উচিত হবে না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অনুগামী অনেক সমর্থক আছে। কিন্তু ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আস্থা হারিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল নোয়াম তিবন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তুলনা করেন নেভিল চেম্বারলিনের সঙ্গে। নেভিল সেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যিনি ১৯৪০ সালে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। আর তার জায়গায় এসেছিলেন উইন্সটন চার্চিল।

তিবন বিবিসি সাংবাদিককে বলেন, “ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এটি ছিল সামরিক ব্যর্থতা, গোয়েন্দা ব্যর্থতা। সরকারেরও ব্যর্থতা…বিশেষ করে যিনি দায়িত্বে আছেন- এবং এর সব দায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিতে হবে, তিনি প্রধানমন্ত্রী… ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ ব্যর্থতার দায় তার ওপরই বর্তায়।

চার.

এও পরিষ্কার যে, আগের বিদ্যমান পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। যদিও আগেও অবস্থা ভাল ছিল না। অস্বস্তিকর, বিপজ্জনক পরিস্থিতি ছিল। তারপরও কিছুমাত্রায় একটি স্থিতাবস্থা বজায় ছিল।

২০০৫ সালের দিকে শেষ ফিলিস্তিন আন্দোলন শেষের পর এক ধরনের কাঠামো গড়ে ওঠে। নেতানিয়াহুর বিশ্বাস ছিল, সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য টিকে থাকতে পারে। সেটিই ছিল সংশ্লিষ্ট সবার- ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলিদের জন্যও মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা।

যুক্তি ছিল যে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের জন্য আর হুমকি নয়, বরং তারা এমন এক সমস্যা যার সমাধান আছে। আর এর ভিত্তিতেই প্রয়োগ করা হয়ে এসেছে, প্রাচীন ‘বিভাজন ও শাসন পদ্ধতি’ এবং প্রয়োজনে কঠোর ও নমনীয় কৌশল।

নেতানিয়াহু ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালে একবার ইসরায়েলের ক্ষমতায় ছিলেন এবং ২০০৯ সাল থেকে বেশিরভাগ সময়ই তিনি ক্ষমতায় থেকেছেন। তিনি সবসময়ই বলে এসেছেন, শান্তির জন্য ইসরায়েলের কোনও অংশীদার নেই। কিন্তু সম্ভবত ছিল।

হামাসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) নানা ত্রুটি থাকা একটি সংগঠন। এর অনেক সমর্থকই মনে করে বয়স হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এখন সরে দাঁড়ানো উচিত। তবে তারা ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা ১৯৯০ এর দশকেই গ্রহণ করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতির মানে হচ্ছে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পিএ- এর মূল্যে হামাসকে গাজায় শক্তি বাড়াতে দেওয়া। নেতানিয়াহু জনসম্মুখে তার বক্তব্য নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকলেও বছরের পর বছর তার নানা কাজেই প্রকাশ পেয়েছে যে, তিনি ফিলিস্তিনিদের একটি আলাদা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেতে দিতে চান না।

কারণ, তা করতে দিলে পশ্চিম তীরে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে, পূর্ব জেরুজালেমেও জায়গা ছাড়তে হবে- যে এলাকা ইহুদিদের বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েলের ডানপন্থিরা।সময়ে সময়ে নেতানিয়াহুর মতামতও ফাঁস হয়ে পড়ত। যেমন- ২০১৯ সালে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছিল যে, নেতানিয়াহু একদল লিকুদ সংসদ সদস্যকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে চাইলে তাদের উচিত গাজায় অর্থায়ন স্কিমে সমর্থন দেওয়া- যে অর্থের বেশির ভাগই দিয়েছিল কাতার।

নেতানিয়াহু আরও বলেছিলেন, গাজার হামাস আর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ)- দু’য়ের মধ্যে বিভক্তি যত বাড়ানো যাবে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ততই কঠিন হয়ে পড়বে।

পাঁচ

এও স্পষ্ট যে, হামাস ক্ষমতায় থেকে যায় এমন কোনও চুক্তি সহ্য করবে না যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েল। আর তেমন হওয়া মানেই আরও বেশি রক্তপাত অনিবার্য। এতে এমন প্রশ্নও ওঠে যে, তাহলে কে বা কারা তাদের (হামাস) জায়গায় আসবে? এর কোনও উত্তর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আরব আর ইহুদিদের মধ্যে জর্ডন নদী ও ভূমধ্যসাগরের মাঝের জমি নিয়ে বিরোধ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলেছিল। এ দীর্ঘ ও রক্তাক্ত ইতিহাসই বলে দেয় যে, সামরিক পথে কোনও সমাধান আসবে না।

৯০ এর দশকে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টায় অসলো শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল।সেটি বাস্তবায়নের সবশেষ চেষ্টা দেখা গিয়েছিল ওবামা প্রশাসনের সময়। বছরের পর বছর চলেছিল আলোচনা। কিন্তু এক দশক আগেই তা ব্যর্থ হয়েছে। তারপর থেকে সংঘাত বেড়ে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ অনেকেই বলছেন, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাটাই আরও যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র সম্ভাব্য সুযোগ। কিন্তু দুই পক্ষে এখন যে নেতারা ক্ষমতায় আছেন, তাতে এটি হওয়া সম্ভব নয়।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন- দুইদিকের চরমপন্থিরা এটি ঠেকাতে যা করার করবেন, যেমনটি তারা ১৯৯০ এর দশক থেকে করে আসছেন। তাদের কারও কারও বিশ্বাস, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করছেন। এমন ধারণাই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আপোস করার ব্যাপারে তাদেরকে রাজি করানো অসম্ভব করে তুলেছে।

কিন্তু চলমান এই যুদ্ধ যদি তাদের সেই ধ্যান-ধারণাকে যথেষ্ট নাড়া না দেয় এবং দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কার্যকর করে না তোলে, তাহলে সেটি হওয়া সম্ভব হবে না। আর দুই পক্ষের বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান না হলে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের আরও বহু প্রজন্ম আরও বেশি যুদ্ধের মুখোমুখি হবে।

%d bloggers like this: