জাতীয়

অবশেষে রাজি মালিক পক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে

দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে কারখানা মালিকরা। প্রস্তাবিত মজুরি থেকে আরও বাড়াতে রাজি হলেও টাকার অঙ্ক এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি মালিক পক্ষ।বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের অনুষ্ঠিত সভায় বোর্ডের সব পক্ষের সদস্যদের আলাপ-আলোচনায় তারা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। সভা শেষে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা (সিনিয়র জেলা জজ)।

সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধি তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি এবং অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।বোর্ড চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আজ বুধবার মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক পক্ষের দাবি ছিল ৭টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ৫টি গ্রেড নির্ধারণ করার। সেখানে মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে।

সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৭টি গ্রেডের স্থলে ৫টি গ্রেড করব। আরেকটি বিষয় হলো- শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে মালিক পক্ষ। তাদের প্রতিনিধি আগামী সভায় লিখিতভাবে জমা দিবেন। মালিক পক্ষের প্রস্তাবনা দেখে শ্রমিক পক্ষ তখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি হবে বা কী করণীয়। যেজন্য আজকে আমরা শ্রমিক পক্ষের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার জানতে পারিনি।তিনি বলেন, এখন শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (আগামী সপ্তাহ) আরও একটি সভা আহ্বান করব।

এজন্য আমি শ্রমিক ভাইবোনদের বলব তারা যাতে কারও উসকানিতে কান না দিয়ে, কলকারখানায় ফিরে যায় এবং কাজ করেন। কারণ শিল্পটা রক্ষা করাটাও তাদের দায়িত্ব। আপনাদের (শ্রমিকদের) রুজি-রুটি এখান থেকে হয়। তাই কোনো কটু কথা না শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে শান্তভাবে কাজ করার অনুরোধ করছি।বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, নভেম্বরের মধ্যেই মজুরি চূড়ান্ত হবে এবং ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে। জানুয়ারি মাস থেকে শ্রমিকরা নতুন কাঠামোতে বেতনভাতা হাতে পাবেন।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে আমরা মজুরির যে প্রস্তাব (১০ হাজার ৪০০ টাকা) জামা দিয়েছিলাম। ওনারা (মজুরি বোর্ড) আমাদের অনুরোধ করেছেন, এখান থেকে আমাদের বাড়াতে হবে। আমি বলেছি, হ্যাঁ আমরা অবশ্যই বাড়াব। সে বিষয়ে আমরা রাজি হয়েছি। কতটুকু বাড়াব, সেটা আমরা আগামী সভায় লিখিত প্রস্তাবনা আকারে তাদের কাছে দিব। তখন তারা সেটি জানতে পারবে। এতটুকু বলতে পারি আগের প্রস্তাব থেকে অনেকদূর বাড়াব। এর পরেও কিন্তু সরকার একজন রয়ে গেছে। আমরা যাই প্রস্তাব করি, বোর্ডের সবাই একম হয়েও যদি কোনো প্রস্তাব দেই, সেখানেও সরকার চাইলে বাড়াতে কমাতে পারে। সেই সুযোগ সরকারের কাছে আছে।

চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে পরিস্থিতি সেখানে আমি মনে করি, একটা সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই তারা রাস্তায় নেমে, কারখানা বন্ধ করে ভাঙচুর করছে। এখানে বলছি আমাদের শ্রমিকরা কখনো তাদের কর্মস্থল ভাঙচুর করে না। কারণ এখানে বহিরাগতরা আছে। অনেকে শ্রমিক গণমাধ্যমে বলছে, আট হাজার টাকা পায়, এটায় তার চলে না। আমি প্রমাণ করে দিতে পারি, এই লোকগুলো কখনো শ্রমিক না। কারণ ৮ হাজার টাকা যে শ্রমিকরা পায়, তারা কখনো কিছু বলে না। যারা ৮ হাজার পায়, তারা একদম নতুন, তার একটা চাকরির দরকার সে ৮ হাজার টাকায় ঢুকছে। অতিরিক্ত সময় যোগ করে মাস শেষে ভালো একটা টাকা নিয়ে বাড়িতে যায়।

অতএব এই আন্দোলন যারা করতেছে, তারা উদ্দেশ্যেমূলকভাবে করতেছে এবং আমরা জানি কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত আছে। আবার কিছু শ্রমিকও যে তাদের সঙ্গে জড়িত নাই তা কিন্তু না।শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা উভয়পক্ষ যে প্রস্তাবনা দিয়েছি, সরকারের সহযোগিতায় একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আসবো। সে পর্যন্ত আপনারা অপেক্ষা করেন এবং যার যার কর্মস্থলে ফিরে যান। গার্মেন্টস জাতীয় সম্পদ, আপনার সম্পদ, আপনারা রক্ষা করেন।শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বলেন, বোর্ড কেন গঠন করা হয়েছে? শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বাড়ানোর জন্য। সেই ন্যায্যতার ভিত্তিতে আলোচনা চলছে। যদিও এই আলোচনা একটু দেরি হচ্ছে।

দেরি হতে পারে। কিন্তু আমরা নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগাচ্ছি। এখন যদি এই কার্যক্রমকে ব্যাহত করা হয়, তাহলে মালিকদের কাছ থেকে দাবি আদায়ের যে কৌশল, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেজন্য শ্রমিক ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ আজকে থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগদান করবে। এবারে ইনশাআল্লাহ শ্রমিকরা একটি ন্যায্য মজুরি পাবে। আমাদের যে ৫টি গ্রেড প্রস্তাব ছিল সেটি আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে শ্রমিকদের যে ন্যায্যতা রয়েছে সেখানে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

এর মধ্যে যদি আমরা নৈরাজ্যের দিকে চলে যাই। তাহলে এই যে দরকষাকষি, সেটি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। প্রতিটি জাগায় আমরা সমস্যার দিকে চলে যাচ্ছি। আমাদের নিরীহ শ্রমিক ভাইবোনরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং কারাই বা আক্রান্ত করছে। এতে যারা প্রথম দিকে এগিয়ে এসেছে, তারা অন্য গোষ্ঠীর লোক। যেহেতু আমাদের শ্রমিকরা এখনও সেই অর্থে সচেতন না, সেজন্য কেউ না কেউ তাদের ভুল বুঝানোর চেষ্টা করতে পারে।

তিনি বলেন, এখানে ৫ কোটি লোকের জীবনযাত্রা জড়িত। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি, বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে আগামী ৫ বছরের জন্য একটি ন্যায্য মজুরি আদায় করার জন্য। আজ মালিক পক্ষ তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। আমরা ভালো একটি মজুরির দিকে যাচ্ছি। আগামী সভায় শ্রমিকদের জন্য একটি ভালো মজুরি আসছে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: