বিনোদন

হরতালে যেমন চলছে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের দুনিয়া

শে বয়ে যাওয়া রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ পড়েছে বিনোদনপাড়ায়। চলমান হরতালে কোন তালে এগোচ্ছে লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশনের দুনিয়া?  হরতালের সময় শুটিংহাউস ও সিনেমা হলে খোঁজ নেয় কালবেলা। এ সময় শুটিং ও প্রেক্ষাগৃহের হালচাল বয়ান করেছেন নির্মাতা ফায়জুল কবির রথি, অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য ও জাহের আলভী এবং স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।

রোববার (২৯ অক্টোবর) উত্তরার আনন্দবাড়ি শুটিং হাউসে দেখা যায়, নাম নির্ধারিত না হওয়া একটি নাটক পরিচলানার কাজে ব্যস্ত আছেন নির্মাতা ফায়জুল কবির রথি। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও হরতালে শুটিংয়ের দশা বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘একটি দল হরতাল দেওয়ার অধিকার রাখে। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু আমরা সাধারণ জনগণ হিসেবে হরতাল মানব কি মানব না—এটা তো আমাদের ব্যাপার, এটা আমাদের নৈতিক অধিকার’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছু প্রি-শিডিউল ছিল। কিন্তু কেউ যদি হঠাৎ করে সন্ধ্যায় ঘোষণা করেন যে, আগামীকাল হরতাল, আর আমরাও যদি সেই হরতালের সমর্থনে কাজ বন্ধ করে রাখি, তাহলে তো হবে না। এটা তো কোনো সিস্টেম হতে পারে না। তারা যদি হরতাল ডাকেনও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ডাকা উচিত, যাতে সাধারণ মানুষ সময় পায়; সেদিন জনগণ তাদের কোনো কাজ রাখবে না। দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত করে যদি কোনো কিছু করতে যায় তাহলে তো আমরা সেই হরতাল মানতে পারব না। আমাদের তো কাজে আসতেই হবে ’।

হরতালের কারণে শুটিংয়ে কোনো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে রথি বলেন, ‘এখনো আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়িনি। কেউ কেউ ভেবেছিলেন গতকালের মতো অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো ঘটনার খবর পাইনি। আমাদের আর্টিস্ট যারা এসেছেন তারাও কোনো বিড়ম্বনায় পড়েননি। ঢাকা ফাঁকা থাকায় তারা সেটে দ্রুত আসতে পেরেছেন’।নির্মাতা রথির সেটেই ছিলেন অভিনেতা জাহের আলভী। হরতালের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা বিড়ম্বনায় তো পড়তেই হয়।

আমাদের যাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট আছে, তাদের হয়তো খুব একটা সমস্যা হয় না। যাদের নিজস্ব ভেহিকেল নাই, তারা যখন শুটিংয়ে আসেন অবশ্যই বিড়ম্বনায় পড়েন। পথে হয়তো তারা ট্রান্সপোর্ট পান না। পেলেও বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এসবের মুখোমুখি হতে হয় অনেক তারকাকে’। তিনি আরও বলেন, এসব পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হয়। আজ হরতাল, গতকালও অনেক উত্তপ্ত ছিল রাজধানী। সবকিছু মিলিয়ে একটা রিস্কের মধ্যেই কাজ করছি আমরা। পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত থাকেন এসব দিনে।

অন্যদিকে ‘চিটার অ্যান্ড জ্যান্টলম্যান’ নাটকের শুটিংয়ের জন্য অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্যকে যেতে হয়েছে গাজীপুরের হাসনাহেনায়। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকেই তো দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেছে। গাজীপুরের হাসনাহেনায় শুটিং। অভিনেত্রী নাদিয়া থাকেন পুরান ঢাকায়। সেখান থেকে তিনি আসতে পারেননি। এসব দুর্ভোগে আমাদের স্টোরি পরিবর্তন করতে হয়’।মিলন আরও বলেন, ‘ধারাবাহিক নাটকের ক্ষেত্রে ক্ষতিটা আরও বড়। এক পর্বের নাটক হলে না হয় ফেলে রাখা যায়, কিন্তু ধারাবাহিকে তো সেই সুযোগ নেই’।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাস্তায় চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে শুটিং শেষ করে বাসায় ফিরব কিনা—সে বিষয়ে সংশয়ে ছিলাম। পরে ভয়ে ভয়ে ফিরেছি’। তিনি আরও বলেন, ‘আজ হরতালের জন্য আমাদের শুটিং কল হয়েছে ভোর ৪টায়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে যেন পড়তে না হয় তাই আলো ফোটার আগে আমরা শুটিং সেটে আসার পরিকল্পনা করি। তার ওপর কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি আনিনি। এক মাইক্রোতে সবাই এসেছি। যথাসময়ে উপস্থিত হতে সেই গাড়িতে চড়তে হয়েছে রাত ৩টায়। রাতে কারোই ভালো ঘুম হয়নি। এখন ঘুম চোখে শুটিং করতে হচ্ছে। শুটিং তো ফেলে রাখা যাবে না। সেটা তো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি’।

এদিকে সিনেমা হলে দর্শক সমাগম কেমন হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছুটা প্রভাব তো পড়েছেই। অনেকেই টিকিট ক্যানসেল করেছেন। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন, তারা হয়তো আজ শো দেখতে পারেননি’।করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের সিনেমা যখন নতুন মোড় নিচ্ছে তখন এসব হরতাল কি দেশি চলচ্চিত্রের গতি কমিয়ে দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেটা হয়তো দুই-একদিনে বোঝা যায় না।

বিষয়গুলো যদি লম্বা সময় ধরে হয়, তাহলে প্রভাব পড়বে ইন্ডাস্ট্রির ওপর। হল মালিকদের ওপরেও প্রভাব পড়বে’।টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা টিকিট কেটেছেন তারা আসতে পারেননি বিভিন্ন কারণে। কিন্তু পরে তারা আবারও টিকিট কিনছে। পথে গাড়ির ব্যাপার আছে, অনেকে দূর থেকে আসেন। গতকালও অনেকটা স্লো ছিল। আজও অনেকটা স্লো আছে। এই প্রভাবগুলো পড়ছে’।

%d bloggers like this: