রাজনীতি

নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আ. লীগের

নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। কেন? ১৯৯৫-৯৬ সালে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেননি? ধ্বংসযজ্ঞ চালাননি? আপনারা যেতে পারেন, তাহলে কেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপি যেতে পারবে না? এ কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের নেতারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন।

আজ সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী আরও বলেন, ‘সংবিধান তো মানুষের কল্যাণের জন্য। সংবিধানে বিধান আছে অনুচ্ছেদ আছে, তাহলে হবে না কেন? আসলে এই জন্যই হবে না, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত টাকা বানানোর যে সুযোগ করে দিয়েছেন, ধনী করার সুযোগ দিয়েছেন সেগুলো কিসের টাকা। এ টাকা তো কুইকরেন্টালের টাকা, পদ্মাসেতুর টাকা, ব্যাংক লুটপাটের টাকা। এগুলো অবাধে পাচার করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনার লোকজন এবং পছন্দের অফিসাররা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে-অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে না, যেভাবে চলছে চলুক।হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘জবরদস্তি করে, জবরদখল করে বারবার ভোটাদের কোণঠাসা করে একতরফা নির্বাচন করবেন, গ্রামে গ্রামে মাইকিং করবেন ভোট কেন্দ্রে আসতে পারবেন না- এভাবে আর চলবে না। নিজের ভোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ এখন সাহসের প্রতীক। বুলেট, লাঠিচার্জ, টিয়াগ্যাস, বিষাক্তগ্যাসে মানুষকে আর কাঁদাতে পারবে না। সব কিছু ধারন করে মানুষ প্রতিহত করবে এই সরকারের সমোস্ত অনাচার, অত্যাচার এবং নিপীড়ন।রিজভী বলেন, ‘অব্যাহতভাবে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনূস মিধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ, আন্দোলনের মাঠে যারা নেতৃত্ব দিতে পারবে তাদের বাছাই করে ধরা হচ্ছে।

এ সময় গত কয়েকদিনে সারাদেশের হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষকদলের আহ্বায়ক আসজাদুল আরিশ ডল, দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বাবলু, কামরাঙ্গীচর থানার বিএনপি নেতা আকরাম, আনোয়ার হোসেন, চকবাজার থানার মাইদুল, আমীর হোসেন, ডেমরার ওয়ার্ড যুবদলের শরীফ, শাহজাহানপুরের ওয়ার্ড বিএনপি নেতা পিন্টু, হলুদ মিয়া, বিল্লাল হোসেন, এলিম হোসেন, খিলগাঁওয়ের সালেহ মোহাম্মদ খোকন, ইলিয়াস আলী, নাজিম উদ্দীন, ইব্রাহিম হকি, মতিঝিলের বকুল মিয়া, বংশালের কসাটুলি, জাবেদ, জাহাঙ্গীর, হাজারীবাগের হারুন, ভাগলপুরের মাসুদ রানা, আলমগীর হোসেন, সবুজবাগের নুরুজ্জামান, বাড্ডার কৃষকদলের কাজী তুষার, ইকবাল হোসেন, গুলশানের দেলোয়ার হোসেন খান, তেজগাঁওয়ের মনিরুজ্জামান মনির, মোহাম্মদপুরের মান্নান হোসেন শাহীন, আদাবরের আজিজ শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কদমতলীর স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজাম হাওলাদার, সায়েম হোসেন, মকবুল হোসেন আল-আমিন হীরা একটি মিথ্যা মামলায় আদালতে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান রিজভী।এছাড়া আরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তুরাগের বিএনপি নেতা রিপন ইসলাম, মনির, উত্তরার সিদ্দিক, মিজান, কামাল হোসেন, সুমন, হৃদয়, মাহবুব আলম, মহসিন হাওলাদার ও জসিম উদ্দিনসহ মোট ১১ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে।

রাজধানী ঢাকার বাইরের জেলা নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদার উল্লাহ ভূইয়া, শহর যুবদলের আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেন চৌধুরী সুমন, বিএনপি নেতা মো. আলী, সজিব ভূঁইয়া, ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম দোলন, রুবেল মিয়া, মুজাহিদুল ইসলাম পিয়াস, আল-মামুন, ঢাকা মহানগর উত্তরের শ্রমিক দলের মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও রুহুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়িতে পুলিশ প্রশাসন নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় লৌহজং উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান, সায়মন মাতুব্বর, সাইফুল মাতুব্বর, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার যুবদলের সাবেক সভাপতি পিন্টু, সদস্য মিজান, বেপারী মিজান ও মিজান বেপারী, নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁও পৌর বিএনপির মো. হুমায়ুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গত ২৮ জুলাই থেকে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩শ ৯৫টি মামলায় ২৬ হাজার ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৭৫ জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গত ১৮ অক্টোবর থেকে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৯টি গায়েবি মামলায় ১২ হাজার ৯৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬শ ২০ জনের অধীক নেতাকর্মকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পাবনা জেলা সাথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলে সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মিঠুকে গ্রেপ্তার করে গত ২২ অক্টোবর বোমা ও অস্ত্র হাতে দিয়ে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘এটা পুলিশের টেকনিক। আমাদের নেতাকর্মীদের ধরে বোমা ও অস্ত্র হাতে দিয়ে তা উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দেয় এবং গ্রেপ্তার দেখায়। আমি অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর আহবান জানাচ্ছি।