সারা দেশ

নড়াইলে আউশের ভাল ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

নড়াইলের মাঠে মাঠে সোনালি পাকা ধানের হাতছানি, উৎসবের আমেজে ফসল কাটতে ব্যস্ত চাষিরা। ডিঙি বোঝাই করে কাটা ধান নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন কেউ কেউ। সরেজমিনে লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ধান কাটার ভরা মৌসুম।

দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠজুড়ে আউশ ধানে পাক ধরায় ফসল কাটতে ব্যস্ত চাষিরা। কোমর পর্যন্ত জলে নেমে হাসির সঙ্গে নানা আলাপচারিতায় চলছে এ ধান কাটা। একদিকে চলছে ধান কাটা, অন্য দিকে ডিঙি বোঝাই করে ধান নেয়া হচ্ছে বাড়িতে। দক্ষ চাষির লগির সুনিপুণ খোঁচায় ধানের ডিঙির সঙ্গে তরতরিয়ে অভীষ্ট গন্তব্যে বাধাহীন এগিয়ে চলে চাষিদের সুখস্বপ্ন।

চাষিরা জানান, মাটি, আবহাওয়াসহ চাষের অনুকূল নানা পারিপার্শ্বিকতায় জেলার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলবর্তী বিলগুলোতে চাষিরা আউশ ধানের আবাদ করে থাকেন। আউশের নানা দেশি জাতের মধ্যে রাতুল ধান অন্যতম। পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ক্রমাগত ফলন বিপর্যয়ের কবলে নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী এ জাতটি হারিয়ে যেতে বসে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাষের নানা অনুকূল পরিবেশের ফলে জনপ্রিয় এ ধান পুনরায় চাষে ফেরাতে পেরে খুশি চাষিরা। প্রতিকূল নানা পারিপার্শ্বিকতায় এ অঞ্চলের চাষিরা আউশ ধান বোনা ছেড়ে দেয়ায় চিরায়ত বাংলার শরতের এই ছবি নড়াইলের প্রকৃতি থেকে এক সময় হারিয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ চাষ উপযোগী অনুকূল আবহাওয়ায় চাষিরা নবোদ্যমে লাভজনক দেশি আউশ ধান আবাদ শুরু করে। এতে প্রকৃতি আবারও ফিরেছে স্বমহিমায়। দেশি আউশ চাষে ব্যাপক লাভের মুখ দেখছেন কৃষক।

লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমে ৬৫ শতক জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগ বীজ বপন, চারা রোপণ তেকে শুরু করে কাঁটা পর্যন্ত সব তদারকি করছে। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছেন দামও ভালো পাবেন।

কালিয়া উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের চাষি ওয়াদুদ মিয়া জানান, বোনা রাতুল আউশ ধান আবাদে বিঘাপ্রতি, স্থানীয় বিঘা ৪৮ শতাংশ ২ হাজার টাকা খরচে প্রায় ২০ মণ ফলন পাওয়া যায়। দাম ভাল পাওয়া গেলে এই জাতের ধান চাষে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করবে।

লোহাগড়া উপজেলাধীন লক্ষ্মীপাশা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানছুরুল হক সুমন বলেন, সুস্বাদু রাতুল আউশ প্রাকৃতিক সেচেই ফলানো সম্ভব, বাড়তি সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এছাড়া অন্যান্য ধান কেটে পরবর্তী ফসলের জন্য জমি পরিষ্কারে ব্যাপক খরচ গুনতে হলেও রাতুলের গোড়া পচে জমিতে মিশে গিয়ে জমি উর্বর করে তোলে।

নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, এবার জেলায় মোট ৯ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে, এর মধ্যে রাতুলসহ স্থানীয় জাতের আউশের আবাদ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভাল হয়েছে। কৃষক ভাল দাম পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।

%d bloggers like this: