সারা দেশ

যমজ সন্তানের মা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠিকানা ছোটমনি নিবাসে

রাস্তায় জন্ম নেয়া সেই যমজ শিশুর অবশেষে ঠাঁই মিললো খুলনার মহেশ্বরপাশার ছোটমনি নিবাসে। আর ভারসাম্যহীন মাকে পাঠানো হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের উপস্থিতিতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।

পরে জেলা প্রশাসক দায়িত্বরতদের মা ও সন্তানদের হস্তান্তর করেন। আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে গন্তব্যে তাদের পৌঁছে দেয়া হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে ভারসাম্যহীন মা মাহিনুর কাঁদছেন ও তার সন্তানদের খুঁজছেন বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। পথিমধ্যে জানতে চান তার সন্তানেরা কোথায়।জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীপুর নতুন গ্রামে রাস্তায় প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী (৩০)। পথচারীরা তাকে তড়িঘড়ি করে নেন রাস্তার পাশের বাসিন্দা জামিরুল ইসলামের খড়ের ঘরে। সেখানে ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করে।

তাদের একজন ছেলে ও একজন মেয়ে। সন্তান প্রসবের পর গুরুতর অসুস্থ নারীকে নেয়া হয় বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।সেখানকার চিকিৎসক তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক সহায়তায় তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত না হলেও পরে স্বজনদের সন্ধান মেলে। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর নাম মাহিনুর। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের চান্দুর মেয়ে। মাহিনুর মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে পথে পথে ঘুরতেন।

ভিটে বাড়ি না থাকার কারণে মাহিনুরের মা জাকিয়া ও ভাই হাসিবুর রহমান নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার মাথাভাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন। ফলে তারা মাহিনুর ও তার যমজ সন্তানকে গ্রহণ করতে রাজি হননি। অন্য স্বজনদের কোন আগ্রহ ছিলোনা।হাসপাতাল সূত্র জানায়, আত্মীয় স্বজন কেউ না আসায় প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মা মাহিনুর তার যমজ সন্তান মোহাম্মদ মুসা ও মোছাম্মদ মায়শাকে দেখভাল করতেন সেবিকা, দুই নারী আনসার সদস্য ও এনজিও কর্মীরা। সমাজসেবা কার্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা চিকিৎসার কাজে দিয়ে সহায়তা করেন।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সব সময় তাদের খোঁজ রেখেছেন। তারা সুস্থ হওয়ার পরও স্বজনদের কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তার সন্তানদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। ১৮ সেপ্টেম্বর যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় মানসিক ভারসাম্যহীন মাহিনুরকে গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে ও যমজ সন্তানকে পাঠানো হবে খুলনার মহেশ্বরপাশার ছোটমনি নিবাসে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ওই মা ও সন্তানদের ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। পরে তাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন যশোর -৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্যা, যশোর সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন প্রমুখ। এসময় সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় তাদেরকে নতুন পোশাকে উপহার দেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার পর ভারসাম্যহীন নারী ও তার যমজ সন্তানের বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের পাশে থাকতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। তাদের সহায়তকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এটা ভেবেই তিনি সর্বদা মা ও সন্তানদের খোঁজ রেখেছিলেন। তাদের সুস্থ করতে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র প্রদান করা হয়।
হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার জানিয়েছেন, মাহিনুরকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার খালেদা আক্তারকে। আর যমজ ভাই-বোনকে খুলনার মহেশ্বরপাশার ছোটমনি নিবাসে নিয়ে যায় জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন। তাদের সাথে বিভিন্ন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবি ছিলেন।

রুবেল হাওলাদার জানান, সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার খালেদা আক্তার তাকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন পথিমধ্যে মাহিনুর তার সন্তানদের খোঁজ জানতে চান। আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর তিনি সন্তানদের খুঁজছেন। আবার মাঝে মাঝে কাঁন্নাকাটি করছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও ছেলে-মেয়ের শূণ্যতা তাকে কষ্ট দিচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content