সারা দেশ

মাজারে সংঘর্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী

সিলেটের হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে স্থানীয় জনতা ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওরসপন্থী ব্যক্তি–ফকির-পাগলদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তিন দিনব্যাপী ওরসের শেষ দিন সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে তিন দিনব্যাপী ওরস শুরু হয়।

ওরস শুরুর আগের দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর গানবাজনার আড়ালে মাজারে মাদক সেবন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে এসব বন্ধের দাবিতে মাজারগেটের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন একদল মুসল্লি। বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় মাজারের খাদেম সৈয়দ কাবুল আহমদ মাজারে গানবাজনা বন্ধের ঘোষণা দেন।

এ অবস্থায় ওরস চলাকালে কেউ যেন মাজারে গানবাজনা চালাতে না পারেন, সে জন্য শুরু থেকেই মাজার কর্তৃপক্ষ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় আলেম-ওলামা কড়া নজর রাখেন।সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে আখেরি মোনাজাত শেষে শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে ওরস শেষ হওয়ার কথা ছিল। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কয়েক শ ব্যক্তি মাজারে এসে কেন গানবাজনা নিষিদ্ধ হলো, এ নিয়ে ক্ষোভ জানান।

বিক্ষোভকারী কিছু ব্যক্তির হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। এ সময় মাজারে থাকা মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের তর্কাতর্কি হয়। ওই ব্যক্তিরা তখন মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে মারধর করেন এবং ফকির-পাগল ও তাদের হয়ে একটি পক্ষ মাজারের ভেতরে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছেন, এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ উত্তেজনার সূত্র ধরেই পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী, মাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকাসহ সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় লোকজন মাজারে আসেন। এ সময় অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। পরে মাজারপন্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।

সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের আঘাতে মাজারের খাদেমের কক্ষের কাচ ভেঙে যায় এবং দানবাক্স লুটপাট হয়।সংঘর্ষ চলাকালে ওরস উপলক্ষে তৈরি করা পাগল-ফকিরদের তাঁবু-আস্তানা ভেঙে ফেলা হয়। তাড়িয়ে দেওয়া হয় মাজারে থাকা পাগল-ফকিরদের। অনেক পাগল-ফকির দৌড়ে পালিয়ে গেলেও বেশ কিছু পাগল-ফকির বেধড়ক পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে পাগল-ফকিরদের পক্ষ নেওয়া মানুষও পিছু হটে।

পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ওরসে আসা মাদকসেবী ব্যক্তিরাই পরিস্থিতি অশান্ত করতে উচ্ছৃঙ্খলতা করেছে। পরে ওই মহল অতর্কিতভাবে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আটকে রাখে।

অন্যদিকে পাগল-ফকিরদের অভিযোগ, গানবাজনা বন্ধের নামে ওরস উপলক্ষে মাজারে আসা ফকির-পাগলদের কোনো কারণ ছাড়াই কিছু ব্যক্তি শুরু থেকেই নানাভাবে হেনস্তা ও অপমান করছিলেন। ওরসের শেষ দিন সংঘর্ষ হলে তাঁদের মারধরও করা হয়।