28 August 2024 , 1:08:23 প্রিন্ট সংস্করণ
সুদীর্ঘ ১০ বছর দুই মাস ১৪ দিন পর নিজের জন্মভূমি কক্সবাজারে আসছেন বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। বুধবার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় পা রাখবেন কক্সবাজার বিমানবন্দরে। সাদা পোশাকধারী আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুম’ হওয়ার পর এই প্রথম তিনি কক্সবাজারে আসছেন। ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সালাহউদ্দিন আহমদকে বরণ করার। পথে পথে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত সুদৃশ্য তোরণ। কক্সবাজার জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, তাদের প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে এমনভাবে বরণ করা হবে, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি, কক্সবাজার পৌর বিএনপি, চকরিয়া উপজেলা বিএনপি, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপিসহ জেলাজুড়ে দলটির সবগুলো ইউনিট ও অঙ্গসংগঠন প্রস্তুতি সভা করেছে। গঠন করা হয়েছে শৃংখলা কমিটি। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে সালঅহউদ্দিনকে স্বাগত জানাবেন। তারপর মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর করে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে তার জন্মভুমিকে। আয়োজন করা হয়েছে একাধিক সংবর্ধনার।
২০১৪ সালের ১৪ জুন তিনি সর্বশেষ কক্সবাজারে রাজনৈতিক সমাবেশ করে ফিরে গিয়েছিলেন রাজধানীতে। তারপর শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ১০ মে রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি ভবন থেকে তাকে তুলে নেয় সাদা পোশাকে কিছু লোক। দুই মাস এক দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে নিজেকে আবিষ্কার তিনি। এরপর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দীর্ঘ লড়াইয়ে মামলা থেকে খালাস পেলেও ট্রাভেল পাসের জটিলতায় আটকা ছিলেন সেখানে।
দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লগি সরকারের পতনের পর সেই জটিলতা কাটে। ১০ বছর ফিরে আসেন দেশে। এখন কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় নিজের দুতলা বাড়ি বাড়িতে ফিরছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তত দিনে অযত্নে বিবর্ণ হয়ে গেছে সেই বাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমদের বাড়ি সংস্কার ও সাজিয়ে গুছিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সাথে প্রস্তুত করা হয়েছে অসম্পূর্ণ অবস্থায় ফেলে যাওয়া তার নতুন বাড়িটিও।সূত্রমতে, বেসরকারি উড়োজাহাজ ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে সালাহউদ্দিন আহমদ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।
তার সাথে থাকবেন স্ত্রী কক্সবাজার-০১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানান, সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যাবেন আগুনে পুড়ে যাওয়া বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শনে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আওয়ামী লীগের একদল সন্ত্রাসী জেলা বিএনপির এই দপ্তরটি পুড়িয়ে দেয়। বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সালাহউদ্দিন সড়কপথে যাবেন চকরিয়ায়।
সেখানে বাস টার্মিনালে রয়েছে তার গণসংবর্ধনা। বেলা ২টায় চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সেই গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তারপর তিনি যাবেন জন্মভুমি পেকুয়ায়। সেখানে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পেকুয়া আউটার স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন তিনি। বিএনপি নেতা ইউসুফ বদরী বলেন, তাদের প্রিয় নেতাকে বরণ করতে শত শত মোটরসাইকেল আর গাড়ির বহর যাবে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসবেন নেতা-কর্মীরা। কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চকরিয়া-পেকুয়ার পথে থাকবে শত শত তোরণ।
সালাহউদ্দিন আহমদের আগমনকে ঘিরে গ্রামে-গঞ্জে চলছে মাইকিং আর নানা ধরণের প্রচারণা। এই সফরে সালাহউদ্দিন আহমদ সপ্তাহখানেক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। এই সময়ে তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ‘যোদ্ধা’দের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া বিগত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে নিষ্পেষিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী জানান, সালাহউদ্দিন আহমদকে বরণে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার শহরে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানিয়ে বিশাল মিছিল করা হয়েছে।