জাতীয়

দুর্নীতিবাজরাও পদোন্নতি পাচ্ছেন

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেন। এরপর শুরু হয় পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো। এর ধারাবাহিকতায় রোববার (২৫ আগস্ট) প্রশাসনে ১৩১ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রোববার পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা হলো ৫২৪ জন।

যদিও অতিরিক্ত সচিবের স্থায়ী পদের সংখ্যা মাত্র দেড় শ। এর মাত্র চার মাস আগে গত ২২ এপ্রিল প্রশাসনের ১৩০ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল হাসিনা সরকার। রোববার (২৫ আগস্ট) জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিসিএস নবম ব্যাচ থেকে শুরু করে ১৮তম ব্যাচ পর্যন্ত মোট ১৩১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নবম ব্যাচের ৩, দশম ব্যাচের ৪, ১১তম ব্যাচের ২৩, ১৩তম ব্যাচের ৩৩, ১৫তম ব্যাচের ২৩, ১৭তম ব্যাচের ৭ এবং ১৮তম ব্যাচের ৩৮ জন।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের প্রশাসনে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। জানা গেছে, সম্প্রতি পদন্নতি পাওয়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের বিগত সরকারের আমলের ‘বঞ্চিত’ দাবি করেছেন। তাদের দাবি, দুর্নীতি ও পেশাগত অসদাচরণের মাধ্যমে বিগত সরকার তাদের পদোন্নতি দীর্ঘদিন আটকে রাখেন। তবে চমকপ্রদ তথ্য হলো, রোববার (২৫ আগস্ট) অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যেও শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক তিন জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) দুর্নীতির অভিযোগ থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্তা সেজে পদোন্নতি বাগিয়েছেন মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস, যিনি হাসিনা সরকারের সময় ঠাকুরগাঁওয়ে ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ঘুষ গ্রহণ, কর্মচারীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযোগের পর গোপালগঞ্জের এই কর্মকর্তাকে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। মুকেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যোগদানের পর ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

আর হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ তাঁর স্ত্রী বিউটি বিশ্বাসের হাতে টাকা তুলে দেওয়া। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ৮ বছর ধরে তিনি একই মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা শাখায় আছেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ক্যাশিয়ার বলেও তাঁর পরিচিতি আছে। এছাড়া পাট অধিদপ্তরের পরিচালক দেওয়ান মো. আবদুস সামাদও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর্থিক অনিয়মের কারণে এত দিন তিনি পদোন্নতি পাননি।

২০২২ সালে তাকে পদোন্নতি দিতে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নওগাঁ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহা. ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের যুগ্ম সচিব দেওয়ান মো. আসুস সামাদ (৬১১৮) দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মকর্তা। তাঁকে অতিরিক্ত সচিব করা হলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

হাসিনা সরকারের আমলে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নোয়াখালীর ডিসি ছিলেন বদরে মুনির ফেরদৌস। তিনিও বঞ্চিতদের কাতারে শামিল হয়ে এবার পদোন্নতি পেয়েছেন। একই সময়ে মানিকগঞ্জের ডিসি ছিলেন ড. রাশিদা ফেরদৌস। তিনিও এবার পদোন্নতি বাগিয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। এ ছাড়া পদোন্নতি পেয়েছেন ইমামউদ্দীন কবীর, যার বিরুদ্ধে পাবনার এডিএম থাকাকালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

এ সময় স্থানীয় লোকজন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে ডিসিকেই প্রত্যাহার করা হয়। তাকেও ফেরত আনা হয়। তারা তিনজনই বিসিএস ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা।