রাজনীতি

বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিরা আপিল বিভাগে নিয়োগ পেতে পারেন

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শনিবার তারা আইন মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন। হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন নাম শোনা যাচ্ছে।

এরা সবাই বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে। এর বাইরেও কারও কারও নাম শোনা যাচ্ছে। সোমবার অথবা মঙ্গলবারের মধ্যে আপিল বিভাগে এ নিয়োগ সম্পন্ন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে, আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ছয় বিচারপতি শনিবার পদত্যাগ করায় আপিল বিভাগে বিচারক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিচার কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে এ শূন্যতা পূরণ করতে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

এদিকে আপিল বিভাগে নিয়োগের পরপরই হাইকোর্ট বিভাগেও বেশকিছু বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। কারণ আপিল বিভাগে নিয়োগের পর হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক সংকট আরও বাড়বে। বর্তমানে আপিল বিভাগে ২ জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮১ জন বিচারপতি রয়েছেন।আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের এমন বেশ কয়েকজন বিচারপতির নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন-হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়াল, বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

এরা সবাই বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে। এর বাইরেও কারও কারও নাম শোনা যাচ্ছে।সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে। ৯৫ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়োগদান করবেন।’ ৯৫(২) অনুসারে, ‘কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছর অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে, বা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে, তিনি বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

সুপ্রিমকোর্টের এক কর্মকর্তা জানান, আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করার পর হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারক আছেন ২ জন। বিচার কার্যক্রম চালু করতে হলে আপিল বিভাগে কমপক্ষে আরও ৬ জন বিচারপতি প্রয়োজন। তিনি বলেন, এমনিতেই সুপ্রিমকোর্টে বিচারক সংকট। নিয়োগ পাওয়ার পর নতুন প্রধান বিচারপতি বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে ৮টি বেঞ্চ চালু করেছেন। সোমবার থেকে এসব বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। দু-এক দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে কিছু বিচারক নিয়োগ দিতে পারে সরকার।

এদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগে বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন-এমন বেশ কয়েকজনের তালিকা করা হচ্ছে। এদের পদত্যাগের জন্য বাধ্য করা হবে। ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন গত সপ্তাহে দুদফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিগত দিনে যারা দলবাজ বিচারপতি রয়েছেন তাদের পদ্যতাগ করার দাবি তোলেন তিনি।৮ আগস্ট ৫০ বিচারপতিকে পদত্যাগের দাবি জানান সাধারণ আইনজীবীরা। সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।

তারা জানান, দলবাজ বিচারপতিদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এদিকে রোববার নবাগত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিল বিভাগের মতো হাইকোর্ট বিভাগেও সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। হাইকোর্ট বিভাগ ঢেলে সাজানো প্রয়োজন মনে করেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অবশ্যই মনে করি। যে কারণে জনরোষ তৈরি হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগে সংস্কার কেন হবে না।

আরও খবর

Sponsered content