সারা দেশ

পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বাড়লো আরো ২৪৯ কোটি টাকা

পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনে ব্যয় আরো একদফা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে এ খাতে ব্যয় ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা। বৃহস্পতিবার (২৯শে জুন) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদী শাসন কাজের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয় ২০১৪ সালের ১৯শে জুন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ওই বছরের ১০ই সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।

প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১০ই নভেম্বর ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে চুক্তিপত্র সই হয়। যার চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। পরে কয়েক দফায় বাড়ানো হয় সময়। এই কাজ তদারকির জন্য কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট হিসেবে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নিয়োজিত আছে।পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহান চলাচল শুরু হওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনের ব্যয় ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৩ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

এখন দ্বিতীয় দফায় পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা বাড়ানো হলো। এতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ালো ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা।সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩০শে জুন ২০২৪ শেষ হচ্ছে। তার মানে আগামীকাল প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নদী শাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। তাদের কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল ৩০শে জুন ২০২৩। ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড আছে একবছর। তার মানে তাদের কাজ শেষ হবে আগামীকাল।

তিনি বলেন, এ সময়ে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হয়েছে। দুটি কারণে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। একটা হলো প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে নদী শাসন কাজের সীমানায় অবস্থিত কাঁঠালাবাড়ি ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট এবং আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে জায়গা পেতে বিলম্ব হয়েছে। এতে তিন বছরের বেশি সময় বিলম্ব হয়েছে।দ্বিতীয় কারণ হলো কাজ করতে যাওয়ার সময় ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর ওজনে নদী শাসন কাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে নদীর প্রচণ্ড স্রোতে নদীভাঙন হয়ে ঠিকাদারের কাজের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ডিজাইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজাইন তৈরিতে বিলম্ব হয়। এ কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দাখিল করেছে, জানান সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান।স্বপ্নের পদ্মা সেতুর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৮-১৯৯৯ সময়ে। ২০০৩-০৫ সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে জাপানের জাইকা। ২০০৬ সালে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। ২০০৯-১১ সময়ে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। নিউজিল্যান্ডভিত্তিক মনসেল এইকম সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর জন্য অর্থায়ন করে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার।

২০১২ সালের জুনে বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণ বাতিল করে। একই বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৪ সালের ১৭ই জুন মূল সেতু নির্মাণ কাজের জন্য চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই বছরের ২৬শে নভেম্বর সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ উদ্বোধন করেন।এরপর ২০১৭ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়।

২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানো হয়। আর ২০২২ সালের ২৫শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন ২৬শে জুন পদ্মা সেতু দিয়ে যানচলাচল শুরু হয়।পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মূল সেতুর কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল)।

%d bloggers like this: