ভিন্ন স্বাদের খবর

বিশ্বব্যাপী চুরি হওয়া মহামূল্যবান ১১টি জিনিস

বিশ্বব্যাপী চুরি হওয়া মহামূল্যবান ১১টি জিনিস

বিলিয়ন ডলারের শিল্পকর্মসহ আরও মহামূল্যবান জিনিস আছে জাদুঘরে। তাই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো এলাকা। তারপরেও নিরাপত্তা বলয় ফাঁকি দিয়ে চোর চুরি করে পালিয়ে যায়। জাদুঘরের বাইরেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাসা, ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে চুরি হয়েছে মূল্যবান বেহালা, ভাস্কর্য, ডাইনোসরের হাড়, স্বর্ণখচিত ডিম। চুরি হয়েছিল আইফেল টাওয়ারও! চলুন জেনে নেয়া যাক সাড়া জাগানো এসব ঘটনা।

 

দ্যা মোনালিসা

বিশ্বের অন্যতম আর্কষণীয় শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় দ্যা মোনালিসাকে। এই ছবিটি মহামূল্যবানও বটে। বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে রাখা এর দাম ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূল্যবান বলে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হত লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসাকে। এত নিরাপত্তার পরেও ১৯১১ সালে চুরি হয়ে যায় চিত্রকর্মটি।

চুরি করেন সেখানে কাজ করা ভিসেঞ্জো পেরুগিয়া। ঘটনার দিন তিনি জাদুঘরের একটি টয়লেটে লুকিয়েছিলেন। অন্য ২ জন কর্মচারীর সহায়তায় সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। প্রধান অপরাধী পেরুগিয়া, ইতালির একজন শিল্প ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করার পর অবশেষে এটি পুনরুদ্ধার করা হয়। ২ বছর পর লুভরে ফিরে আসে দ্যা মোনালিসা।

 

দ্যা কনসার্ট

অসম্ভব জনপ্রিয় ডাচ চিত্রশিল্পী জোহানেস ভার্মিয়ারের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য কনসার্ট’। ১৯৯০ সালে ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়াম থেকে চুরি করা হয়। অবাক করার মত তথ্য হল একই সময়ে আরও ১১টি চিত্রকর্ম চুরি হয়। তবে, দ্যা কনসার্টটি ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল। যার বাজার মূল্য ছিল ২০০ মিলিয়ন ডলার। চুরি হওয়া ১২টির দাম সবমিলিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

 

স্ট্রাডিভারিয়াস

স্ট্রাডিভারিয়াস একটি মূল্যবান বেহালা। দাম সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার। বিখ্যাত বেহালা বাদক এরিকা মরিনি বেহালাটি ১৭২৭ সালে এটি তৈরি করেছিলেন। নিউইয়র্ক সিটিতে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে চুরি হয়। মূল্যবান সম্পত্তি চুরি হওয়ার পরপরই মারা যান জনপ্রিয় এই ব্যাক্তি। বেহালাটির হদিস আর কোনদিন পাওয়া যায়নি।

 

দ্যা স্ক্রিম

এডভার্ড মুঞ্চের বিখ্যাত চিত্রকর্মটির চারটি সংস্করণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ১২০ মিলিয়ন ডলারের চিত্রকর্ম। বর্তমানে সংরক্ষিত আছে নরওয়ের অসলোতে ন্যাশনাল গ্যালারিতে। চোরেরা চিত্রকর্মটি ১৯৪৪ চুরি করে। চুরির ঘটনা ঘটে ৬০ বছর পরে ২০০৪ সালেও। অপরাধীরা ১ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। তবে সফল হয়নি তারা। এক স্টিং অপারেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। চিত্রকর্মটি ফিরে আসে জাদুঘরে।

 

দ্যা সালিয়েরা

সালিয়েরা ২৫ সেন্টিমিটারের একটি স্বর্ণের ভাস্কর্য। ১৬ শতকের শিল্পী বেনভেনুটো সেলিনি ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের জন্য তৈরি করেছিলেন। এটি কেবল একটি চমৎকার ভাস্কর্যই ছিল না বরং এর বাস্তবিক ব্যবহারও ছিল। এখানে লবণ এবং মরিচ রাখা হত। প্রায় ৭৭ মিলিয়ন ডলারের ভাস্কর্যটি ২০০৩ সালে ভিয়েনার একটি জাদুঘর থেকে চুরি হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে চোর কয়েক বছর ধরে নিজের দখলে রাখতে পেরেছিল।

 

ডাইনোসরের হাড়

অপরাধী এরিক প্রোকোপি মঙ্গোলিয়া থেকে অর্ধ ডজনেরও বেশি ডাইনোসরের কঙ্কাল চুরি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন। দাম ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে যায়। এফবিআই এই ব্যক্তিকে আটক করে তিন মাসের জেল দেয়। পরে ডাইনোসরের হাড়গুলি মঙ্গোলিয়ায় ফেরত দেয়া হয়।

 

ফ্যাবার্গের রত্নখচিত ডিম

হাউস অফ ফ্যাবার্গ রাশিয়ান রাজপরিবারের জন্য ৫০টি রত্নখচিত ডিম তৈরি করেছিল। বলশেভিক বিপ্লবের সময় সেগুলি হারিয়ে যায়। ৭টি ছাড়া বাকি সবই এখন জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রয়েছে। প্রতিটির মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি। হারিয়ে যাওয়া ডিমগুলি এখন পর্যন্ত চুরি হওয়া সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিনিসগুলির মধ্যে একটি।

 

১৩৫০ কিলোগ্রামের ঘণ্টা

২০০৫ সালে ওয়াশিংটনের টাকোমার বৌদ্ধ মঠ থেকে একজন ভিয়েতনামি তামার ঘণ্টা চুরি করে। সন্ন্যাসীরা গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকাকালীন অপরাধীরা সেখান থেকে নিয়ে যায়। তিন বছর পরে সেটা উদ্ধার হয়।

 

অ্যাম্বার রুম

অনেকের মতে ‘অ্যাম্বার রুম’ হল “পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।” এটি ১৮ শতেকর গোড়ার দিকে প্রুশিয়ার রাজা ফ্রেডরিকের জন্য নির্মিত হয়েছিল। স্বর্ণের চেম্বারটি ১৯৪১ নাৎসিরা চুরি করে রাশিয়ার কোনিগসবার্গ দুর্গে নিয়ে যায়। কক্ষটি ১৯৪৫ সালে দুর্গের সাথে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ এখনও বিশ্বাস করেন সেটি অক্ষত আছে এবং দুর্গের ভিতরে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে।

 

ডরোথির রুবির রেড স্লিপার

২০০৫ সালে মিনেসোটার জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়। দাম ২ থেকে ৩ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে জানা যায়। হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান এই জিনিস ফিরে পেতে ১ মিলিয়ন ডলার পুরষ্কার ঘোষণা দেয়া হয়। ১৩ বছর পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই মূল্যবান জুতা উদ্ধার করে।

 

এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে করেন। সাংবাদিকররা এই কাজটি করেন জমির লেনদেন সংরক্ষণে আইনি ফাঁকফোকর রয়েছে তা প্রমাণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা। বিষয়টি প্রমাণ করতে সফল হয়েছিলেন সংবাদকর্মীরা। ভবনটি সঠিক মালিককে ফিরিয়ে দেয় নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ এবং শহরে সংশ্লিষ্ট আইন কঠোর করা হয়। উল্লেখ্য, এই সম্পত্তির মূল্য ছিল ১.৮৯ বিলিয়ন ডলার।

আরও খবর

Sponsered content