সারা দেশ

সবজি বিক্রির টাকায় হজে না গিয়ে মসজিদ নির্মাণ

৩০ বছর ধরে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন হারুন অর রশীদ হাওলাদার (৬৮)। সবজি বিক্রির টাকায় তার ছয় সদস্যের সংসার চলে। তার স্বপ্ন ছিল সবজি বিক্রি করার টাকা জমিয়ে একদিন তিনি হজ করতে মক্কায় যাবেন এবং একটি মসজিদও নির্মাণ করবেন। তাই কষ্ট করে অল্প অল্প করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন তিনি।

হারুন অর রশীদ একদিন ভেবে দেখলেন যদি তিনি হজ করেন তাহলে তার একার সওয়াব হবে। কিন্তু যদি তিনি একটা মসজিদ নির্মাণ করেন তাহলে এলাকার সবাই সেখানে নামাজ পড়তে পারবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। পরে জমানো টাকা দিয়ে তিনি জমি ক্রয় করে নির্মাণ করলেন শাহী জামে মসজিদ। হারুন অর রশীদ হাওলাদার ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মৃত মেনাজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে।

হারুন গণমাধ্যমকে বলেন, সবজি বিক্রি করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে রামপুর এলাকায় জমি ক্রয় করি। এরপর সেখানে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেছি। ওই এলাকার আশপাশের কোনো গ্রামে মসজিদ না থাকায় সবাইকে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়। বৃষ্টির মৌসুমে এলাকার মুসল্লিদের নামাজ পড়তে বাউকাঠি বাজারের মসজিদে যেতে কষ্ট হয়। অনেকেই যায় না। বাড়িতেই নামাজ পড়ে।

তাই চিন্তা করলাম হজে না গিয়ে সেই টাকা দিয়ে এই এলাকার মানুষের জন্য মসজিদ নির্মাণ করি। তাতে এই এলাকার মানুষের কষ্ট কম হবে।তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো মানুষের সহযোগিতা নেওয়া হয়নি। জমি ক্রয় থেকে মসজিদ নির্মাণ সব কিছুই আমার টাকায় করেছি। এখনও মসজিদের অনেক কাজ বাকি আছে। মসজিদের টাইলস, অজুখানা, পুকুরে ঘাটলা, ফ্যান, মাইক, মসজিদের সামনে একটা বারান্দার কাজ বাকি আছে। এছাড়া হুজুরের থাকার জন্য একটা রুম করতে হবে।

যদি কেউ সহযোগিতা করে, তাহলে মসজিদের বাকি কাজগুলো করতে পারবো। এবং বাচ্চাদের জন্য একটা মাদরাসা নির্মাণ করতে পারবো। আশা আছে সবকিছুই করবো বাকিটা আল্লাহ ভরসা।মসজিদের মুসল্লিরা জানান, হারুন ভাইর অর্থ সম্পদ নেই। তিনি একজন সামান্য সবজি বিক্রেতা হলেও অল্প অল্প করে পুঁজি জমিয়ে মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে জমি ক্রয় করে একটা আল্লাহর ঘর মসজিদ তৈরি করছেন। এই এলাকায় অনেকেরই জমি আছে টাকাও আছে কিন্তু মন নেই, যেটা হারুন ভাইয়ের আছে। মানুষের অর্থ সম্পদ থাকলেই হবে না।

মন ও থাকতে হবে। আমরা তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তার মনের সব আশা পূরণ করেন।এ বিষয়ে ৩নং নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুল হক বলেন, এটা তিনি (হারুন) ব্যক্তিগত মসজিদ তৈরি করেছেন। এখানে আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা সম্ভব না। ওখানে মসজিদ নির্মাণ না করে তার পেছনে ২০০ গজ দূরে একটা পাঞ্জেগানা মসজিদ (ছোট কাঠের তৈরি একটি মসজিদ) আছে সেট পুনরায় নির্মাণ করলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল কাইউম বলেন, সবজি বিক্রির টাকায় জমি ক্রয় করে মসজিদ নির্মাণ করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। তার মতো একজন সবজি বিক্রেতা হয়েও মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এটা আসলেই একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

%d bloggers like this: