4 May 2024 , 5:34:50 প্রিন্ট সংস্করণ
মানিকগঞ্জে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিরুদ্ধে ভুয়া কাবিননামায় বিয়ে করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্ত্রী পরিচয় এবং সামাজিক মর্যাদা পেতে ভুক্তভোগী নারী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।অভিযুক্ত ওই এএসআই আকবর আলী বর্তমানে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় ছিলেন।ওই পুলিশ কর্মকর্তা নারীকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় এবং সামাজিক মর্যাদা দিতে অস্বীকার করায় জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী।
সেখানে তেমন একটা অগ্রগতি না পেয়ে পরে জেলা লিগ্যাল এইডে অভিযোগ করেন ওই নারী। লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দেওয়ার পর এএসআই আকবর আলী ভুক্তভোগী নারীকে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপার মাধ্যমে আপস করার চেষ্টা করেন।কিন্ত ভুক্তভোগী ওই নারী টাকার প্রলোভনে রাজী না হয়ে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা পেতে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।লিগ্যাল এইডের প্রতিবেদন, মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে আমিনুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ২ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী নারী।
সেই টাকা কথামত ফেরত না দেওয়ায় আমিনুরের বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক আকবর আলী খন্দকারের সঙ্গে পরিচিত হন৷ পরবর্তীতে তারা মোবাইলে বিভিন্ন সময় কথা বলতেন এবং আকবরের কথামতো বিভিন্ন জায়গায় দেখা করতেন। এর মধ্যে এএসআই আকবর আমিনুরের কাছে থেকে ভুক্তভোগী নারীকে ১ লাখ টাকা আদায় করে দেন। কথা ও দেখা করার মাধ্যমে একপর্যায়ে তারা প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ান।
এরপর, গত বছরের ১০ অক্টোবর মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ভুক্তভোগী নারীর কাছে থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন আকবর।এরপর গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী নারীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এক ব্যক্তিকে কাজী পরিচয় দিয়ে নিয়ে আসেন এএসআই আকবর আলী খন্দকার। তখন ৫ লাখ টাকা কাবিন করিয়া কাবিননামায় ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর নেয় এবং আকবর ভুক্তভোগীকে বলে আজ থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী। তবে, চাকরির ক্ষতি হবে বলে আপাতত বিয়ের কথা গোপন রাখার কথাও জানান আকবর।
এরপর থেকে নিয়মিত ভুক্তভোগীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস ও শারীরিক সম্পর্ক করেন এএসআই আকবর আলী খন্দকার।পরবর্তীতে গত ৩০ নভেম্বর তার স্ত্রী হিসেবে পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করাতে এবং সামাজিক মর্যাদা দিতে বললে আকবর আলী অস্বীকার করেন। এরপর থেকে ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন তিনি। বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী। সেখানে তেমন অগ্রগতি নেই দাবি করে গত ২৮ জানুয়ারি জেলা লিগ্যাল এইডে অভিযোগ করেন ওই নারী।
লিগ্যাল এইডে অভিযোগ করার পর আকবর আলী ভুক্তভোগী নারীকে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আপস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই নারী টাকা না নিয়ে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা পেতে গত ২৪ এপ্রিল অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘সাজানো বিয়ের ঘটনার আগে আকবর আলী খন্দকার মানিকগঞ্জ কোর্টের পাশে সিটি ড্রিম অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারের আবাসিক হোটেলে নিয়ে বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। পরবর্তীতে ভুয়া কাবিননামা ও বিয়ের নাটক সাজানোর পরে বহুবার আমার বাসায় এসে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ও বসবাস করেছেন।
আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছি।স্ত্রী হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি চাইলে সে এখন আমাদের বিয়ে অস্বীকার করে বলেন, তুমি আমার স্ত্রী না। ভুয়া কাবিনে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি অভিযোগ-মামলা করার পর থেকে সে আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিচ্ছেন। আমি আকবর আলী খন্দকারের কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা চাই।এ বিষয়ে হরিরামপুর আকবর আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন থানায় আছি।এখানে আসেন কথা বলি।জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, বিষয়টি পিবিআইকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে, পিবিআই রিপোর্ট দেবে। আর আমাদের এখানে যেটা আছে, সেটা আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।