লাইফ স্টাইল

যেভাবে হতে পারেন আপনিও দক্ষ পাবলিক রিলেশনস অফিসার

জনসংযোগ বলতে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের (যেমন- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান) পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রচার করার কর্মকাণ্ডকে বোঝায়, যার লক্ষ্য ওই ব্যক্তি বা সংগঠন সম্পর্কে জনগণের ধারণার ওপর প্রভাব বিস্তার করা। জনসংযোগ ও প্রসিদ্ধিলাভের মধ্যে পার্থক্য আছে।

জনসংযোগের ওপরে ব্যক্তি বা সংগঠনের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ থাকে, অন্যদিকে প্রসিদ্ধিলাভ নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়, বরং বহিস্থ কোনো পক্ষ কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রসিদ্ধিলাভে অবদান রাখে।কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কোনো সরাসরি অর্থ পরিশোধ ছাড়াই জনসাধারণের জন্য আগ্রহজনক কোনও বিষয় ও সংবাদ ব্যবহার করে দর্শক-শ্রোতা-পাঠকের কাছে প্রসিদ্ধিলাভ ও পরিচিতি লাভ করলে সেটিকেও জনসংযোগ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।

এইরূপে জনসমক্ষে দৃষ্টিগোচর হওয়া মূলত সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং জনসংযোগ হল বিপণনমূলক যোগাযোগের এমন একটি রূপ, যা বিজ্ঞাপন অপেক্ষা স্বতন্ত্র। জনসংযোগ পেশাদারদের লক্ষ্য হলো তাদের ক্রেতাদের জন্য বিনামূল্যে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন সৃষ্টি করা বা অর্জন করা; একে অর্জিত মাধ্যম বলে। অন্যদিকে বিপণন বা বিজ্ঞাপনের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হয় বলে এগুলোকে ক্রয়কৃত মাধ্যম ডাকা হয়। তবে ২০২৪ সালে এসে বিজ্ঞাপনও ব্যাপক অর্থে জনসংযোগ কর্মকাণ্ডের অংশে পরিণত হয়েছে।

যারা জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কাজ করতে চান তাদের অবশ্য ই সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়ন অথবা দীর্ঘ সময় টেলিভিশন/পত্রিকায় কাজ করে আসলে ক্যারিয়ার গড়া সহজ হবে৷ ২০১১ সালে বেসরকারি টেলিভিশন একুশের হাত ধরে আমার যাত্রা শুরু হয়ে দীর্ঘ ১২ বছর সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কাজ করায় আমার খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে যে সকল স্কিল্ড থাকা লাগবে তা তুলে ধরা হলো।

 

১) প্রেস রিলিজ: একজন সফল জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দক্ষ কর্মী হতে গেলে আপনাকে প্রেস রিলিজ লিখতে জানতে হবে।এটি সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হবে আপনার এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে।

২) ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট: বর্তমানে বেশীরভাগ জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মী নিলে খেয়াল করবেন তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কাজ জানে এমন স্কিল্ড সম্পূর্ণ জনবল চায়। তার জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জানা ও ছোট -বড় পরিসরে কি দায়িত্ব পালন করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে হবে অবশ্য ই। পাশাপাশি এখন থেকেই নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শেখা শুরু করতে হবে।

৩) বিজ্ঞাপন প্রচার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা: একজন সফল জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দক্ষ কর্মী হতে গেলে আপনাকে বিজ্ঞাপন প্রচার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন আবশ্যকীয়। ধরুন! আপনার প্রতিষ্ঠান হেড অব মার্কেটিং কিংবা ব্রান্ড হেড চাচ্ছে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, যমুনা টেলিভিশনসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে বিজ্ঞাপন। সে অনুযায়ী আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ! মিডিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে এই সেক্টরে ভালো করতে হলে।

৪) গণমাধ্যমের টিআরপি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ধারণ: ধরুন! আপনার বাজেট রয়েছে বছরে ২ কোটি টাকা খরচ করার৷ এখন কোন কোন প্রতিষ্ঠানের দর্শক বা পাঠক কি পরিমাণ রয়েছে সেটা জানা আবশ্যকীয়।

৫) প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডারি হিসেবে ভূমিকা পালন: একজন দক্ষ জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী সে প্রতিষ্ঠানের বড় একজন কাণ্ডারি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এমন সব বিষয়ে আপনাকে রাখতে হবে বড় ভূমিকা।

৬) মিডিয়া মনিটরিং রিপোর্ট তৈরি: একজন দক্ষ জনসংযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টনের মধ্যে কাজ সীমাবদ্ধ নয়। সঠিক সময়ে তা চলেছিল কিনা বা প্রকাশ করেছে কিনা সেটার রিপোর্ট তৈরি করতে হবে আপনাকে।

৭) আউটডোর ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা: ধরুন! আপনার প্রতিষ্ঠান নতুন একটি চকলেট বাজারে এনেছে। এটা শুধু যে টেলিভিশন বা পত্রিকায় প্রচার হলেই কাজ শেষ তা নয়। আপনাকে আউটডোর ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো লাগবে পুরো দেশজুড়ে। যেন অল্প সময়ের মধ্যে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত হয়।

৮) গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠান মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন: প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া মুখপাত্র হিসেবে আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

৯) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগীদের সম্পর্কে জানা: ধরুন! আপনার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে রিয়েল এস্টেট নিয়ে। এখন অন্য রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান কিভাবে ভূমিকা পালন করছে ব্র্যান্ডিং করছে তার সমীক্ষা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে।

%d bloggers like this: