সারা দেশ

হাতে ভাঁজা মুড়ি বিক্রি করেই স্বাবলম্বী হচ্ছে গৃহবধূরা

ধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশের মুড়ি উৎপাদনকারী কারখানা গুলো অনেকটা এগিয়ে গেলেও। এখনো শিল্প সমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েক গ্রামের গৃহবধূদের ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাঁজা মুড়ির চাহিদা বাজারে ভাঁটা পড়েনি। প্রক্ষান্তরে দিন-দিন জেলার ভোজনরসিকদের কাছে হাতে ভাঁজা মুড়ির চাহিদা দিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবার চলতি রমজান মাসের শুরু থেকেই স্বরণকালের সর্বোচ্চ মুড়ি উৎপাদন করছে উপজেলার কয়েক গ্রামের গৃহবধূ মুড়ি শ্রমিকরা।জানা যায়, উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের কম্বল পড়া, বাশাকৈর গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের গৃহবধূরা গেল কয়েক যুগ ধরে হাতে ভাঁজা মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করেই তাদের সংসারের অর্থনৈতিক চাকা ঘোরাচ্ছে।

সরেজমিনে, কম্বল পড়া গ্রামের কয়েক বাড়িতে কথা হয়। গৃহিণী মুড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে। এ সময়ে তারা জানিয়েছে, তাদের গ্রামসহ তাদের আশেপাশের কয়েক গ্রামের গৃহবধূররা গেল দুই যুগ ধরে হাতে ভাঁজা মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করেই দিন-দিন তাদের পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।কম্বল পড়া গ্রামের গৃহবধূ মুড়ি শ্রমিক রহিমা খাতুন জানান, প্রথম যে দিন নববধূ সেজে তিনি শশুর বাড়িতে আসেন।

সেই দিনই দেখেন বাড়িতে মুড়ি ভাঁজার ধুম পড়েছে। তখন নতুন বউ হওয়ায় শুধু চেয়ে-চেয়ে মুড়ি ভাঁজা দেখেছেন।তিনি বলেন, পরিবারের অন্য গৃহবধূরা বাড়তি আয়ের জন্য মুড়ি ভাঁজাচ্ছে দেখে কিছু দিন পরেই মুড়ি ভাজার কাজে লেগে পরি। প্রথম দিকে ভালো মুড়ি ভাজতে পারতাম না। স্বাশুরির কাছ থেকে শিখেছি মুড়ির ধান প্রস্তুত সেখান থেকে মুড়ি ভাজার নানা কৌশল।

প্রতিদিন গড়ে ৭ মন চালের মুড়ি ভাঁজতে পারি। মুড়ির পাশাপাশি খই, চিড়া ও মুওয়া তৈরি করে বিক্রি করেছি।রহিমা খাতুন বলেন, মুড়ি, খই, চিড়া ভেঁজে স্থানীয় বাজার ও পাইকারদের কাছে বিক্রি করেই। ছেলে মেয়ের পড়া লেখার খরচ চালিয়েছি। শুধু তাই নয় কিছু সম্পদও করেছি।মুড়ি শ্রমিক গৃহিণী রেবেকা বলেন, হাতে ভাঁজা মুড়ি বিক্রি করেই স্বামীর পাশাপাশি তিনি সংসারের বাড়তি আয়ের যোগান দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করছি। রমজান মাস এলে মুড়ির চাপ বেড়ে যায় অনেক। আমাদের গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ির খ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। এই মুড়িতে কোনো রাসায়নিক সার দেয়া হয় না। লবণ আর বালু দিয়ে ভাজা হয় মুড়ি। বছর জুড়েই বাজারে এই গ্রামের মুড়ির চাহিদা থাকে এবং দামও ভাল পাওয়া যায়।

মুড়ি শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, মুড়ি ভাঁজতে হলে আমন, পুইকাবি আর-১১ ব্যাবহার হয়। তাহলে সেরা মুড়ি উৎপাদন করা যায়। এছাড়া ১ মণ ধানে ২৭ কেজি চাল হয়। ১ মণ চালের মুড়ি ভাজলে ১৮ -২০ কেজি মুড়ি তৈরি হয় বলে জানান মুড়ি শ্রমিকরা। যেখানে মেশিনের তৈরি মুড়ি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০/৮০ টাকা। সেখানে হাতে ভাঁজা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০/১২০ টাকা কেজি।

কালিয়াকৈরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুড়ি সংগ্রহ করেন। কদম আলী নামের এক পাইকার। তিনি বলেন, যারা একটু স্বাস্থ্য সচেতন তারা হাতে ভাঁজা মুড়ি ছাড়া মেশিনে ভাঁজা মুড়ি কিনেন না। এই রমজানে প্রতি সপ্তাহে ২০/২৫ মণ মুড়ি ক্রয় করছি। এই মুড়ি গুলো ঢাকা শহরের বড়- বড় দোকানে পাঠাই। ভাল দাম পাওয়া যায়।

বাপ-দাদার পৈতৃক পেশা এই হাতে ভাঁজা মুড়ি শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের এ পেশায় বেশিই ঘরের বধূরা কাজ করে। তারা সংসারের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে তারা এ পেশায় কাজ করেন। তবে এই ব্যবসা আরও একটু ভালো ভাবে করতে হলে আর্থিক ভাবে সাপোর্ট প্রয়োজন। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো স্বল্প সুদে মুড়ি উৎপাদনকারীদের ঋণ সহায়তা দিলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন এ শিল্পাঞ্চলের মুড়ি উৎপাদনকারীরা।

কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান জানান, হাতে ভাজা মুড়ি খেতে অনেক সুস্বাদু। এই মুড়িতে কোন ধরনের রাসায়নিক না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না।কালিয়াকৈর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার গৃহিনীরা হাতে ভাঁজা মুড়ি উৎপাদন করেই সংসার চালাচ্ছে। এটা স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যতটুকু সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: