সারা দেশ

সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলামকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল দস্যুরা

সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলামকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল দস্যুরা

এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সেদিন দুপুর তিনটা ১২ মিনিটে অস্ত্র ঠেকানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিটাডেলে (জাহাজের গোপন ও নিরাপদ কক্ষ) আশ্রয় নেওয়া বাকি সব নাবিকদের ব্রিজে আসার নির্দেশনা দেন।

তবে সেকেন্ড অফিসার ও ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার সিটাডেলে আশ্রয় নেননি।এমভি আবদুল্লাহ থেকে জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ জাহাজের মালিক কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং এর প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমের কাছে পাঠানো লিখিত বার্তায় এই তথ্যই পাওয়া গেছে।

দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ২২ দফায় সেদিনের জাহাজের অবস্থার কথা বর্ণনা দেওয়া বার্তায় উল্লেখ করা হয়, দস্যুরা জাহাজের কাছে আসার পর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।তবে শেষের দিকে সকলে সিটাডেলে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু জাহাজের সেকেন্ড অফিসার ও কর্তব্যরত ইঞ্জিনিয়ার আশ্রয় নেননি।

আর এরপরপরই তিনটা ১২ মিনিটে দস্যুদের অস্ত্রের কাছে জিম্মি হন সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম।এ সময় মোজাহেদুল ইসলাম জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছে জিম্মির কথা বললে জাহাজের ক্যাপ্টেন সেই সকল নাবিককে সিটাডেল থেকে বের হয়ে ব্রিজে (জাহাজ পরিচালনার কক্ষ) আসার নির্দেশনা দেন। সর্বশেষ জিম্মিদের কাছে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়।

মাস্টারের নোটে আরও উল্লেখ করা হয়, দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগে সবার কাছে সাহায্যের মেসেজ দেওয়ার পরও কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে ওই সময় এমভি আবদুল্লাহর পাশে আরও আট থেকে নয়টি জাহাজ ছিল। দস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাওয়ার পর বিকেল পাঁচটায় সোমালিয়া উপকূলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা বর্ণনা করা হয়।

এ বিষয়ে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।তবে জাহাজ বিপদে পড়লে মাস্টারের পক্ষ থেকে এমন নোট দেওয়া হয়ে থাকে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজ থেকে সকল তথ্য পাঠানোর প্রযুক্তি রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন দুপুরে একটি লিখিত রিপোর্ট জাহাজের ক্যাপ্টেন মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে থাকে।অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দস্যুতা, সামরিক অভিযান কিংবা কোনো দুর্যোগে জাহাজের নাবিকদের আশ্রয়ের জন্য জাহাজের মধ্যে একটি গোপন কক্ষ থাকে। সেই কক্ষ জাহাজের নাবিকরা ছাড়া আর কেউ জানে না কোথায় রয়েছে।

সেখানে নাবিকরা আশ্রয় নিলে বাহির থেকে তাদের কেউ আটক করতে পারে না। তবে শর্ত থাকে যে, সকল নাবিককে সেখানে আশ্রয় নিতে হবে। একজনও যদি বাইরে থাকে তাহলে তাকে জিম্মি করে বাকিদের বের হয়ে আসতে বলবে দস্যুরা।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি শেষে অবসরে যাওয়া অভিজ্ঞ এক কর্মকর্তা জানান, জাহাজের সিটাডেল (গোপন কক্ষ) এমন একটি কক্ষ যেখান থেকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।

একই সঙ্গে ওই কক্ষে পৃথক ইঞ্জিন রয়েছে যা দিয়ে শুধু জাহাজ পরিচালনা করা যায় না কিন্তু জাহাজের অভ্যন্তরের সব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখন সেদিন সব নাবিকরা কেন সিটাডেলে আশ্রয় নেননি তখনকার পরিস্থিতিই ভালো বলতে পারবে।উল্লেখ্য, সোমালিয়ান ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি করে এমভি আবদুল্লাহকে।

এ সময় জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ছিল। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙর করে। জাহাজটি বর্তমানে উপকূলের প্রায় এক নটিক্যাল মাইলের মধ্যে নোঙর করা রয়েছে। জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে দস্যুদের একজন ইতিমধ্যে কথা বলেছে। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ইতিমধ্যে জাহাজের মালিক কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ নাবিকদের স্বজনদের সঙ্গে গত শুক্রবার ইফতার করে এবং তাদের সকলকে মানসিক সাপোর্ট দেয়।একইসময় নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তাদের আশ^স্ত করে। এর আগে একই মালিক গ্রুপের এমভি জাহান মনিকে ২০১০ সালে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।