17 February 2024 , 3:34:30 প্রিন্ট সংস্করণ
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। একই মাঠের এক প্রান্তে কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করতে ড্রামে দেওয়া হচ্ছে আগুন। অপর প্রান্তে ফাল্গুনের আধো আধো মিষ্টি রোদে মাঠের মধ্যে শুকানোর অপেক্ষায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হলুদ। এসব হলুদ শুকিয়ে শেষে বিশালাকার একটি ফলার মেশিনে দিয়ে হলুদকে রিফাইন বা তার উপরিঅংশ ছাড়ানো হয়। এরপর ফলার মেশিন থেকে হলুদ বের করে বিক্রির উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে প্রস্তুত করা হয়।এদিকে শুকনো হলুদের উচ্ছিষ্ট অংশ বস্তায় ভরে প্রতি মণ ৫০০-৫৫০ টাকা করে কিনে নিয়ে যায় মশার কয়েল উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে।
বলছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার মুসলিম পাড়ার পেশাগত হলুদ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের কথা। দুই যুগ ধরে এ পেশাতেই চলে তার জীবিকা ছোটবেলা থেকেই হলুদের সঙ্গেই তার বসবাস। এ বছর প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার হলুদ লেনদেন করেন তিনি। বিগত বছরগুলোতে হলুদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার দরুন লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। এবার হলুদের দাম বেশি বিধায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন তিনি।হলুদের শহর খ্যাত পাহাড়ি এলাকা মাটিরাঙ্গায় উন্নতমানের হলুদ চাষ হয়।
এ এলাকার হলুদ ফরমালিন মুক্ত এবং গুণগত মান ভালো হওয়ায় সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়। এ হলুদে রয়েছে অসাধারণ কিছু ভালো গুণ যার একমাত্র কারণ পাহাড়ি হলুদ চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার একদমই নেই। তাই পুষ্টিগুণ স্বাদ ও কালার অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করে। কিছু কিছু পাহাড়ি এলাকাতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয় হলুদ। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ হয় বলে এ অঞ্চলের হলুদ খুবই সুস্বাস্থ্যকর।মাটিরাঙ্গায় এবার হলুদের ভালো ফলন হয়েছে। তাই বেশ কয়েক দিন ধরে হলুদে ভরে উঠেছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। সারাদেশে পার্বত্যাঞ্চলের হলুদের চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে হলুদ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে উৎপাদিত হাজার হাজার টন হলুদ যাচ্ছে সমতলে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা হলুদ নিতে আসছেন পাহাড়ে।জানা যায়, গত বছর কাঁচা হলুদের দাম ছিল মণ প্রতি ৪০০ টাকা, শুকনো হলুদ বিক্রি করা হতো ৪০০০ টাকা এ বছর হলুদের দাম বেড়ে প্রতি মণ কাঁচা হলুদের দাম ১১০০ টাকা। শুকনো হলুদ মণ প্রতি ৮৪৮০ টাকা বিক্রি করা হয়। ৬ মণ কাঁচা হলুদে ১ মণ শুকনো হলুদ তৈরি হয়। অন্যান্য বছরেরর তুলনায় এ বছর হলুদের দাম বেড়েছে দিগুণেরও বেশি।মাটিরাঙ্গায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে হলুদের।
মাটিরাঙ্গায় সদর ইউনিয়নের বাইল্যাছড়ি রসুলপুর, বেলছড়ি, গোমতী, বড়নাল, তবলছড়ি, ও তাইন্দং এলাকায় হলুদের চাষ হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হলুদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩০ হেক্টর জমি। অর্জন হয় ৮২০ হেক্টর জমি। সে বছর ১০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর হলুদের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হলুদের লক্ষ্যমাত্রা জমি ছিল ৮৫০ হেক্টর জমি। একই বছরে ১০ হেক্টর বেড়ে অর্জন হয় ৮৬০ হেক্টর জমি।হলুদ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, খাগড়াছড়ির রিসাং জড়না এলাকার স্থানীয় পাহাড়িরা হলুদ চাষ করে বেশি।
গত বছর হলুদের দাম করে যাওয়ায় অনেকে হলুদ চাষ করেনি। এ বছরও ওই এলাকায় হলুদ চাষ কম হলেও দাম বেশি। দুই যুগ ধরে স্বস্ত্রীক হলুদ প্রসেসিং করেন তিনি।মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, অনাবাদি ও পতিত জমিতে হলুদ ভালো হয়। মাটিরাঙ্গায় এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার হলুদের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর কৃষক লাভবান হবেন।