সারা দেশ

একসাথেই বাবা-ছেলের মৃত্যু পাশাপাশি কবরে দাফন

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৯টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ি এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে রতন প্রামাণিক (২৮), তার ছেলে মো. সানি (৪) ও সহযাত্রী শরিফ মণ্ডল (৪০) মারা যান। বাস বিকল হওয়ায় চার বছরের ছেলে সানিকে প্রস্রাব করাতে নামেন রতন প্রামাণিক। নিয়ে যান সড়কের পাশেই রেললাইনের দিকে। এ সময় হঠাৎ লাইনে চলে আসে ট্রেন।

কিছু বুঝার আগেই মুহূর্তেই কাটা পড়ে মারা যান বাবা–ছেলেসহ তিনজন।আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাযা শেষে জোনাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে বাবা- ছেলেকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।রাতে দুর্ঘটনার পরই রেলওয়ে পুলিশ মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

বাবা-ছেলে ছাড়াও নিহত হন রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্রা গ্রামের আলম মণ্ডলের ছেলে শরিফ মণ্ডল।ছেলেকে প্রস্রাব করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন রতনের স্ত্রী ঊর্মি খাতুন। চোখের সামনে স্বামী ও সন্তানের ট্রেনে কাটার দৃশ্য কিছুতেই ভুলতে পারছেন না নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের আদগ্রামের বাসিন্দা ঊর্মি খাতুন। আহাজারি করতে করতে তিনি বলছেন, ‘চোখের সামনে ট্রেন কেটে দিয়ে গেল আমার কলিজার (সন্তান) টুকরাটাকে।

সানিকে বাঁচাতে যেয়ে ওরা দুজনও মরে গেল।শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আদগ্রামে রতন প্রামাণিকের বাড়িতে শত শত মানুষের ভিড় জমে। রতন ও তার সন্তানের মরদেহ দেখতে এই ভিড়। বাবা-ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। ঘটনায় যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে ওই এলাকায়। নিহত রতন প্রামাণিকের চাচাতো ভাই মিনারুল প্রামাণিক জানান, রতন অনেক দিন ধরে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।

কিছু দিন আগে ঢাকার একটা পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা হয় তার। গত বৃহস্পতিবার রতন বাড়িতে এসেছিলেন স্ত্রী-ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে।তিনি বলেন, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রতন। বড়াইগ্রাম থেকে বাসে পাশাপাশি আসনে বসে সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর টাঙ্গাইলের আনালিয়াবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে বাসটি বিকল হয়ে যায়। স্ত্রীকে বাসে বসিয়ে রেখে শিশুসন্তানকে প্রস্রাব করানোর জন্য পাশের রেললাইনের কাছে যান। সেখানে সন্তানের পর তিনিও প্রস্রাব করছিলেন। এ সময় শিশুটি রেললাইনে উঠে পড়ে। তখনই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলে আসে। শিশুটিকে রক্ষা করতে রতন ও তার সহযাত্রী শরিফ মণ্ডল রেললাইনে উঠলে ট্রেনটি তাদের তিনজনকেই চাপা দিয়ে চলে যায়।

এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ওমর ফারুক বলেন, গতকাল রাত ২টার দিকে বাবা-ছেলের মরদেহ গ্রামে এসে পৌঁছায়। আজ বেলা ১১টার দিকে জোনাইল ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে জোনাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

%d bloggers like this: