25 October 2023 , 1:15:27 প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করতে তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণ হতে পারে। তবে নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে ইসিতে মতানৈক্য বাড়ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিভিন্ন ছোটখাটো ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়েছে।সম্প্রতি ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশিত পরিবেশ’ আছে কি নেই– সেই ইস্যুতে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়ায় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।ঘটনার সূত্রপাত ‘নেতিবাচক ধারণাপত্র’ নিয়ে। জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে ‘নেতিবাচক ধারণাপত্র’ পাঠিয়েছেন। তবে সিইসির ‘নেতিবাচক ধারণাপত্রে’র বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছেন ইসির একাধিক কমিশনার।
গত ১৮ অক্টোবর গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলমের সই করা একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে আগামী ২৬ অক্টোবর নির্বাচন ভবনে ‘গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালায় অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছে পাঠানো সিইসির আলোচিত ধারণাপত্রে বলা হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা এখনো হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই। নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন আছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথষ্ক্রিয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না।আরও বলা হয়, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে।
পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। কমিশন গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।এ নিয়ে কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সোমবার (২৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘কমিশনের সদস্য হলেও আমাদের অজান্তেই অংশগ্রহণকারীদের কাছে ওই ধারণাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমরা কিছুই জানি না। এটা ঠিক হয়নি।
তবে দ্বিমত পোষণকারী কমিশনের আরেক সদস্য মো. আলমগীর এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। ধারণাপত্রে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা তিনি সঠিক বলে মনে করেন না– এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা দু’জনই এ বক্তব্যকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ব্যক্তিগত মত বলে মনে করেন। এটি কমিশনের সম্মিলিত বক্তব্য হিসেবে মানতে নারাজ।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) একই ইস্যুতে সিইসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে কমিশনের আরেক সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আহসান হাবিব খান বলেন, ‘প্রত্যাশিত যে পরিবেশ, তা এখনও সৃষ্টি হয়নি। এটা কিন্তু এখন না, প্রতিটি নির্বাচনের সামনে এমন ঘটনা ঘটে, কেউ বলার সৎসাহস রাখেননি। সবার এমন সাহস থাকে না।এ বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ইসি সদস্যদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির দুই সদস্যের দ্বিমত পোষণের বিষয়ে আহসান হাবিব খান আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নেই। অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশ আছে।
তিনি বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটা এখনও হয়ে ওঠে নাই বলা হচ্ছে (ধারণাপত্রে)। সব সময় কি একই রকম পরিবেশ থাকে? অতীতে যে ভোটগুলো হয়েছে, আপনি কি দেখেছেন শতভাগ পারফেকশন পরিবেশ কি সব সময় ছিল? আপনারা কিন্তু একজন কমিশনারকে আরেকজন কমিশনারের মুখোমুখি করিয়ে দিচ্ছেন। অবশ্যই তারা যুক্তিসংগতভাবে বলেছেন।
এর আগে বিতর্কিত রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো এবং দ্বিতীয় দফা সংলাপের আয়োজন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া ইভিএমের ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারলে বিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হবে– একজন কমিশনারের এমন বক্তব্য নিয়েও নিজেরা বাগ্যুদ্ধে জড়ান ইসি সদস্যরা।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে সাংবিধানিক পদধারীদের এমন আচরণ ‘অশনিসংকেত’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি সদস্যদের প্রকাশ্যে মতবিরোধ হওয়াটা সুখকর কোনো খবর নয়। পাঁচ সদস্যের কমিশনে মতবিরোধ হতেই পারে। সবাই সব ইস্যুতে একমত হবেন না। তবে সেটি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়।