বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

গুগল যেসকল সেবা বন্ধ করে দেবে

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি সেবা বন্ধ করে দেবে গুগল। এ তালিকার প্রথমেই রয়েছে গুগল পডকাস্ট। গত এপ্রিলে ইউটিউব পডকাস্ট চালু হওয়ার পর থেকেই গুগল পডকাস্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ধীরে ধীরে গুগলের সব ধরনের মিডিয়াকেই গ্রাস করে নিচ্ছে ইউটিউব। এর আগে ইউটিউবের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে গুগল মিউজিক এবং গুগল ভিডিওস।

ইউটিউবের অফিশিয়াল ব্লগ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, গুগলের দুটি পডকাস্ট অ্যাপ প্রয়োজন নেই, বিধায় গুগল পডকাস্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে গুগল পডকাস্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।তবে, বন্ধের আগে ইউটিউব পডকাস্টকে অন্যান্য দেশেও সম্প্রসারিত করা হবে। বর্তমানে ইউটিউব পডকাস্টের সেবা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া গেলেও এ বছরের মধ্যেই তা বৈশ্বিকভাবে পাওয়া যাবে।

গুগল পডকাস্ট গুগলের তৃতীয় পডকাস্টিং পরিষেবা। এর আগের দুটি হলো—গুগল রিডারের গুগল লিসেন (২০০৯–২০১২) এবং গুগল প্লে মিউজিক পডকাস্ট (২০১৬–২০২০)। গুগল পডকাস্টের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। তবে, শুধু মোবাইল গুগল সার্চ ব্যবহারের মাধ্যমেই এ সেবা ব্যবহার করা যেত বলে তা ব্যাপক সমালোচিত হয়।

গুগল অ্যাপে কোনো পডকাস্ট খুঁজলে ফলাফল হিসেবে প্রত্যেক পর্বের পাশে একটি প্লে বাটন দেখা যেত, কিন্তু সাবস্ক্রাইব করার কোনো সুবিধা ছিল না। অ্যান্ড্রয়েড গুগল পডকাস্ট দুই বছর পর সাবস্ক্রিপশন সুবিধাটি আনলেও তা ২০২০ সালে আইওএস অ্যাপ আসার আগে তেমন সুবিধা দিতে পারেনি।

গুগল পডকাস্টের ৮ বছর হলেও তা তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ইউটিউব বলছে, ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডিসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পডকাস্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ ইউটিউব ব্যবহার করেন এবং মাত্র ৪ শতাংশ গুগল পডকাস্ট ব্যবহার করেন।’

ইউটিউব প্রিমিয়াম লাইট
ইউটিউব প্রিমিয়াম লাইটও গুগল পডকাস্টের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে। ইউটিউব প্রিমিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছাড়াই ইউটিউব ও ইউটিউব মিউজিক ব্যবহার করা যায়। ইউটিউব প্রিমিয়ামের লাইট সংস্করণ ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু ইউরোপেই বিজ্ঞাপন ছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখা যেত।

এর জন্য ব্যবহারকারীদের খরচ করতে হতো মাসিক প্রায় ৭ ইউরো, যেখানে মূল সংস্করণের জন্য গুনতে হতো প্রায় ১২ ইউরো। সীমিত কয়েকটি দেশে এ সেবা চালু হওয়ায় অনেকেই এর সম্পর্কে জানেন না। শুধু বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে এবং সুইডেনেই ইউটিউব প্রিমিয়াম লাইট সেবাটি চালু ছিল।

ব্যয়বৃদ্ধির কারণে নিয়মিত ইউটিউব প্রিমিয়ামের সাবস্ক্রিপশন খরচ গত জুলাইয়ে বেড়ে হয়েছে ১৪ ডলার। সবার জন্য এ দাম কার্যকর করতে হলে ব্যবহারকারীদের কম খরচের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বর্তমানে যত ইউটিউব প্রিমিয়াম লাইট ব্যবহারকারী আছেন তাঁদের সবার কাছে একই ই–মেইল গেছে। মেইলে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর তাঁদের বর্তমান সাবস্ক্রিপশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং যদি তাঁরা আগের মতো বিজ্ঞাপন ছাড়া ইউটিউব দেখতে চান তবে তাঁদের পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

বেসিক জিমেইল
বন্ধ হয়ে যাওয়ার তালিকায় তিন নম্বরেই রয়েছে বেসিক জিমেইল এইচটিএমএল ভিউ। ওয়েব ভার্সনের ডিফল্ট জিমেইল খুবই জটিল ও ভারী, এ কারণে সব ব্রাউজারে সহজে লোড হয় না। আবার ইন্টারনেটের গতি কম থাকলেও সমস্যায় পড়তে হয়। সবাই যাতে জিমেইল ব্যবহার করতে পারেন সে জন্য ‘বেসিক এইচটিএমএল’ সংস্করণ রয়েছে।

ইন্টারনেট সংযোগ ভালো না হলে এবং ডিফল্ট জিমেইল লোড হতে সমস্যা হলে, ব্যবহারকারীদের বেসিক এইচটিএমএল মোডে যাওয়ার অপশন থাকে।তবে এখন আর ব্রাউজারের সামঞ্জস্য বজায় রাখার ঝামেলা নেই। ইন্টারনেটের গতিও সব জায়গায় বেশ ভালো। তাই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে জিমেইলের এইচটিএমএল ভিউ।

এর মধ্যে গুগলের জিমেইলের নকশা বহুবার পরিবর্তন করা হলেও বেসিক এইচটিএমএলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই জাভাস্ক্রিপ্ট ও হোয়াইট স্পেস আসার আগে ই–মেইল দেখতে কেমন ছিল তার ঝলক এখনো পাওয়া যায় বেসিক এইচটিএমএলে।বেসিক এইচটিএমএলে শুধু যে নকশা অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে তাই নয়, এতে অফলাইন সাপোর্ট, লেবেল কালার, এনক্রিপ্টেড ই–মেইল এবং ই–মেইল শিডিউল করার মতো সুবিধাগুলোও অনুপস্থিত।

এমনকি পেজের নিচের ‘টিপস’ অপশনটিও হালনাগাদ করা হয়নি। তবে স্ক্রিন রিডার অপশনের জন্য বেসিক এইচটিএমএল সংস্করণটি দৃষ্টিশক্তিহীনদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।