বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফেসবুক এখন ২০ বছরের টগবগে যুবক

বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফেসবুক এখন ২০ বছরের টগবগে যুবক

দেখতে দেখতে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম ফেসবুক ২০ বছর পার করেছে। তবে ফেসবুকের ২০ বছরের এ যাত্রাটায় সাথে ছিলো আলোচনা-সমালোচনা। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্ক জাকারবার্গ এবং তার তিন বন্ধুর প্রচেষ্টায় যাত্রা শুরু করে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্মের শীর্ষে রয়েছে ফেসবুক।

গত দুই দশকে বৈশ্বিক যোগাযোগে এ প্লাটফর্মের ভূমিকা অনন্য বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।তবে বলা হয়ে থাকে জনপ্রিয়তা সবসময় একরকম থাকে না। ফেসবুকের ক্ষেত্রেও এ কথা উপযুক্তভাবে খাটে। প্রথমদিকে ফেসবুক যতটা জনপ্রিয় হিসেবে নিজের ডালপালা মেলছিলো আস্তে আস্তে এ যাত্রাটা বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। বর্তমান সময় এ মিডিয়াটি ধর্মীয়, সামাজিক বিতর্ক ছড়ানো ও অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ।

এছাড়াও প্রশ্ন থেকে যায়, প্লার্টফর্মটি জনগন ও ব্যবহারকারীদের মাঝে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টিও।এর আগে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে ক্ষতিকর কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু প্রচারের অভিযোগে তলব করে মার্কিন কংগ্রেস। সেখানে তাঁর প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে শিশু-কিশোরদের মৃত্যুর জন্য তাঁদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান তিনি।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে অভিযোগ যতই থাকুক ফেসবুক দিনদিন তাঁদের আয় বাড়িয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করে যাচ্ছে বিভিন্ন ফিচার এড করে সাইটটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার। এরই মাঝে ফেসবুককে লড়তে হচ্ছে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লার্টফর্ম টিকটক ও ইউটিউবের সাথে। কোন কোন ক্ষেত্রে টুইটার বর্তমান এক্স এর সাথে। এক্ষেত্রে ফেসবুক নিজেদের লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ফেসবুক নিয়ে এসেছে ফেসবুক শর্টসসহ আরও বেশ কিছু ফিচার।

তবে দিন দিন ফেসবুক মানুষের হাতে চলে আসার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটা হচ্ছে ফেসবুকের মোবাইল ভার্সনের এপটি। এই এপগুলো না থাকলে ফেসবুক এতোটাও জনপ্রিয় হতো কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে স্মার্টফোনে প্রথমদিকে যতটা সহজেই মেসেজ বা বার্তার আদানপ্রদান করা যেতো এই মাধ্যমটির মাধ্যমে এখন সরাসরি মেসেজ বা বার্তা আদানপ্রদানের জন্য ব্যবহার করতে হচ্ছে মেসেঞ্জার নামক আরেকটি এপ।

এক্ষেত্রে যাদের স্মার্টফোন একটু কম দামের তাঁদের জন্য এই প্লার্টফর্মটি বের করেছে ফেসবুক লাইট ও মেসেঞ্জার লাইট নামক দুইটি আলাদা এপ্লিকেশন।তবে ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের জন্য নিজেদের ভাবের আদানপ্রদানের সবচেয়ে বিপ্লবটি ঘটে ২০০৯ সালে লাইক বাটন নামক ফিচারটি নিয়ে আসার পর থেকে। এই বাটনটির মাধ্যমে মানুষ নিজেদের পছন্দের কন্টেন্টি লাইক করে সহজেই জানিয়ে দিতে পারছে।

এই মাধ্যমটি ২০১২ সালে সারাবিশ্বব্যাপি ১ বিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ নিজেদের যোগাযোগ কিংবা মতপ্রকাশের জন্য মাধ্যমটিকে ব্যবহারের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার মাত্রা বাড়তেই থাকে। এরই মাঝে ফেসবুক তাঁদের ওয়েবসাইটে পেজ, গ্রুপ, কমিউনিটি, গেমসসহ বেশ কিছু ফিচার সংযোজন করে।যোগাযোগের ভাষায় বললে ফেসবুক হয়ে উঠে পাবলিক স্ফেয়ার।

তবে এর পর থেকেই ফিল্টারিং না থাকা, যাচ্ছেতাই সংবাদ কিংবা ভুয়া সংবাদ প্রচারের বিষয়ে নিজদের উদাসীনতা, ভায়োলেন্সসহ বেশ কিছু কারণে ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকে।২০১৬ সালে সালে এই সামাজিক মাধ্যমটি মার্কেটপ্লেস নামক একটি ফিচার যোগ করে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একটা ভরসার স্থান হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের কথাও যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে ফ্রি তে বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রির এ ফিচারটির কারণে দেশে বিক্রয় ডট কম সহ বেশ কিছু আলাদা মাধ্যমের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

তবে এসব ভালো দিকের ভিতরেও রয়েছে অন্ধকার দিক। এর মাঝে সবচেয়ে আলোচিত যে দিকটি সেটা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই তাঁদের ডাটা বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগ। ২০১৮ সালে প্রথম এ অভিযোগ যখন উঠে তখন বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হয়ে যায়। যদিও ফেসবুক বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সাফাই দিচ্ছে তবে কখনই বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেনি।

২০২১ সালে ফেসবুক মেটাভার্স হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে ডালপালা আরও মেলতে শুরু করেছে। বর্তমানে ফেসবুক, হোয়াটস এপ, ইন্সটাগ্রাম, থ্রেডসসহ বেশকিছু যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে মেটার অধীনে। ২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল, এই ২০ বছরে ফেসবুক এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জনগনের মাঝে এই মাধ্যমটির প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বলাই যায় বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফেসবুক এখন ২০ বছরের টগবগে যুবক।