28 September 2023 , 4:33:50 প্রিন্ট সংস্করণ
মসলার রানী হিসেবে পরিচিত মিষ্টি এবং সুস্বাদু উপাদান এলাচ। এটি খাবারের সুগন্ধের জন্যও পরিচিত। এক প্রকার ভেষজ জাতীয় গাছের ফল এলাচ। রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর ভূমিকা অতুলনীয়,আবার ঔষধি হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বের কারণে এলাচকে মসলার জগতের রানী বলা হয়ে থাকে।
এলাচ কি?
এলাচ হল জিঙ্গিবেরাসি পরিবারের দুটি ভিন্ন প্রজাতির বীজ থেকে তৈরি একটি মশলা। দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের পাহাড়ী বনাঞ্চলের এই মশলাটি প্রাচীনকাল থেকেই রান্নার একটি প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছে। এর ব্যবহার শুরু হয় কমপক্ষে ৪ হাজার বছর আগে থেকে। প্রাচীন গ্রীক, রোমান এবং মিশরীয়রা এই মশলা অনেক পছন্দ করে থাকে।
সবুজ এলাচ: এটি সাধারণ ধরনের এলাচ যা আমরা প্রতিদিন আমাদের রান্নায় ব্যবহার করি। এটি সাধারণত মিষ্টি স্বাদের, আকারে ছোট হয়ে থাকে।
কালো এলাচ : এটি বাদামী রঙের, বড় আকার এবং কিছুটা লম্বা আকৃতির হয়। এটি পূর্ব হিমালয়ের স্থানীয় এবং সিকিম, পূর্ব নেপাল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে চাষ করা হয়।
এলাচের পুষ্টিগুণ
এলাচিতে অনেক পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ওষুধি অনেক গুণাগুণ রয়েছে। একটি এলাচে রয়েছে,
ভিটামিন- রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন-সি
খনিজ পদার্থ- আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম
অত্যাবশ্যকীয় তেল- পাইনিন, সাবিনিন, মাইরসিন, ফেল্যান্ড্রিন ইত্যাদি।
এলাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে : এলাচ শুধুমাত্র স্বাদে সমৃদ্ধ নয়, এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বিপাক ক্রিয়া উদ্দীপিত। এতে একটি শীতল প্রভাব রয়েছে যা গ্যাসের কারণে বুকে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। এটি পেটের আলসার কমাতেও সাহায্য করে। এলাচ পাকস্থলীতে বাইল অ্যাসিড নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে, হজমে এবং সঠিক চর্বি বিপাককে আরও সাহায্য করে।
২. মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি : অনেকেই খাবারের পরে মুখ থেকে দুর্গন্ধ রুখতে এবং শ্বাসকে সতেজ রাখতে এলাচ খেয়ে থাকেন। এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত সিনিওল নামক উপাদান ব্যাকটেরিয়াগুলির সাথে লড়াই করে মুখের গহ্বরকে সুস্থ রাখে। এলাচের শক্তিশালী স্বাদ লালা প্রবাহকে উদ্দীপিত করে এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
৩. ক্ষুধা বাড়ায় : এলাচ একটি দুর্দান্ত ক্ষুধা উদ্দীপক। এলাচ তেল অ্যানোরেক্সিয়া (ক্ষুধা হ্রাস) চিকিৎসার জন্য উপকারী। জ্বর বা অন্য কোন রোগের পরে ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে এলাচির কয়েকটি বীজ দিনে ২-৩ বার চিবিয়ে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
৪. বমি ভাব দূর করে : এলাচিতে থাকা অ্যান্টি-এমেটিক বৈশিষ্ট্য বমি বমি ভাব এবং বমি কমায়। টক স্বাদ এবং জ্বালাপোড়াসহ বমি হলে এটি বেশি উপকারী। তাই ভ্রমণের সময় মোশন সিকনেসের প্রবণতা থাকলে এলাচ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫. ধূমপান রোধ্যে সহায়তা করে : যারা ধূমপান ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক থেরাপি। এলাচের শুঁটি দিনে ৪ থেকে ৬ বার চিবিয়ে খেলে ধূমপানের তৃষ্ণা, অস্থিরতা, অধৈর্যতা এবং উদ্বেগ কমায়। এটি ঘুমের মান উন্নত করে এবং বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করে।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে : উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এলাচ বেশ উপকারি। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এতে থাকা খাদ্য-তালিকাগত ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কালো এলাচ হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবুজ এলাচের চেয়ে অনেক ভাল কাজ করে।
৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে : এলাচের গুঁড়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে উপকারী। এটি ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এলাচ রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৮. ঠান্ডা এবং কাশির কমায় : এলাচের অ্যান্টিটিউসিভ এবং মিউকোলাইটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি শ্লেষ্মা উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে এবং কাশি ও সর্দি দূর করে। এটি ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে : এলাচে থাকা কিছু নির্দিষ্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই মশলা টিউমারকে আক্রমণ করার জন্য প্রাকৃতিক ঘাতক কোষের ক্ষমতাও বাড়াতে পারে। এক প্রাণী গবেষণা অনুসারে, এলাচ গুঁড়া সেবন টিউমার রোধ করতে পারে, বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
১০. ডিটক্সিফায়ার হিসাবে কাজ করে : এলাচ শরীরের জন্য একটি সম্ভাব্য ডিটক্সিফায়ার। এটি রক্তে টক্সিন কমায় এবং ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।