এক্সক্লুসিভ

কুমারখালীতে ইমামের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে নানা আলোচনা-আসলে কী জামায়াত-কওমী দ্বন্দ ?

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সোন্দাহ বাইতুল হামদ জামে মসজিদের ইমাম মিনহাজ আল আদনান চাকুরি থেকে অব্যহতির ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নানা রকম মন্তব্যের ঝড় উঠেছে। এতে ষ্পষ্ট হয়েছে, তাহলে কী জামায়াত – কওমী দ্বন্দ্বে এই পরিস্থিতি হয়েছে? বিষয়টি নিয়ে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট ও সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। এমন বিষয় একজন ঈমামের নিকট থেকে আশা করা যায় না বলেও অনেকেই মন্তব্য করছেন।
মসজিদের মুসল্লিরা জানান, গত পহেলা নভেম্বর মসজিদে ঈমাম হিসেবে যোগদান করেন মিনহাজ আল আদনান। তিনি গত মাসের ২২শে নভেম্বর শুক্রবার জুম্মার খুৎবায় ঈমান ও আকিদা নিয়ে কথা বলেন। এরপর সমসাময়িক বিষয় ইসকন নিয়েও কথা বলেছেন। নামাজ শেষে তিনি সাধারন মুসুল্লিদের তার পরিবার এবং তার অবস্থান অনেক বড় বলে নানান গল্প করেন। সে সময় তিনি তার বেতন কেন্দ্রীক নানান কথা তুলে ধরেন। তার বেতন কম, কমিটির বিবেক নেইসহ বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। বিষয়টি সাধারন মুসুল্লিরা ভালোভাবে নেননি। যার ফলে সেদিনই তাকে কমিটির পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়, আগামী মাস থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এর প্রেক্ষিতে গত রবিবার সকালে তার নিজ ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করেন ইসকন নিয়ে আলোচনা করায় আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপরই শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ইমাম আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই কৌশল অবলম্বন করেন।
নেটিজেনদের কেউ কেউ বলছেন, ঈমামকে চাকুরিচ্যুত করা অথবা ঈমাম নিজেও এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরাটা ঠিক হয়নি। তারা উভয় বসে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করতে পারতেন, এতে করে সমগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজের উপর বিরুপ ধারনার সৃষ্টি হতো না। কোন তৃতীয় পক্ষও সুযোগ পেত না এখানে।
এবিষয়ে ঈমাম বলেন, সেদিন মুল আলোচনার বিষয় ছিলো- তাওহিদ এবং আকিদা নিয়ে। কোন কোন বিষয়ের উপর আমাদের ঈমান রাখতে হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ইসকন নিয়ে  কথা চলে আসে। তারা তখন আর আমাকে কিছু বলেনি এরপর গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে বলেন বিশ্ব রাজনীতি ও ইসকন নিয়ে মসজিদে কোন আলোচনা করা যাবে না। তখন আমি তাদেরকে উত্তর দিলাম -কোরআন হাদিস নিয়ে কথা বলতে গেলে বর্তমান প্রচলিত যে রাজনীতি চলে আসে- কোনটা পক্ষে যায়, বা বিপক্ষে যায়। এখন এগুলো নিয়ে যদি আপনারা কথা বলতে না দেন, তাহলে তো সম্ভব না আমার পক্ষে ইমমিতি করার। সে মুহুর্তে তারা বললেন, আপনি উপরে চলে যান পরে কথা হবে। আজকে (রবিবার) ফজর বাদ তারা আমাকে বললেন, আপনি চলে যেতে পারেন। আজকে ১ তারিখ আজকের পর থেকে আপনি আর এখানে থাইকেন না। ২৮ তারিখে তারা আমার বেতনও দিয়ে দেয়।।
মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আব্দুল আহসান শমসের বলেন, ইসকন বিরোধী কথা বলার কারণে, সোন্দাহ বাইতুল হামদ জামে মাসজিদ থেকে বিদায় দিলেন- কমিটির লোকেরা, এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মসজিদের ঈমাম মিনহাজ আল আদনান। তবে তার সাথে বেতন নিয়ে আমাদের কথা হয় । ঈমাম বলেন পার্শ্ববর্তী মসজিদে বারো হাজার টাকা দিতে চেয়েছে আমাকে আপনারা নয় হাজার টাকা দিবেন। সে সময় আমরা তাকে আট হাজার টাকা দিতে চাই এবং আপনার কার্যক্রম দেখে এক হাজার বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়। এই শর্তে তিনি রাজি না হওয়ায় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়, আগামী মাস থেকে আপনি অন্য কোথাও চাকরি দেখেন। অথচ এরই প্রেক্ষিতে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে ইসকন ইস্যু তুলে ধরেন। যেহেতু তিনি ২২ নভেম্বর ইসকনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন, সে কারনেই সবাই এটা বিশ্বাস করে এবং একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিষয়টি অনেকেই জানেন না, যে কারনে ঈমামের ফেসবুক পোষ্ট দেখে অনেকেই ভিন্নভাবে দেখছেন বিষয়টি। ঈমামের এধরনের মন্তব্যের কারনে স্থানীয়দের মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যা একজন ঈমামের নিকট থেকে কোনভাবেই কাম্য না। নিজের যোগ্যতা বলে তিনি আরো বড় মসজিদে যোগাযোগ করতে পারেন- তাই বলে এলাকার সম্প্রীতি ক্ষুণ্য করার অপপ্রয়াস কাম্য না। ইসকন বা দেশের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা কখনই সমর্থন করি না।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর নানা আলোচনা সমালোচনার পরে কওমী ঘরানার কিছু আলেম এসে স্থানীয় কথিপয় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মাগুরা থেকে আসা ইমাম সাহেব বহাল হলেও তিনি বাড়ী চলে গেছেন। নতুন কমিটি হলে আসবেন বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় ষ্পষ্ট হয়েছে আসলে কী জামায়াত – কওমী দ্বন্দ্ব ও সামাজিকতার কারনেই এই পরিস্থিতি হয় ? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। উপজেলার অনেক মসজিদে এমন ঘটনা হলেও এই কওমী ঘরানার আলেমদের এভাবে কোনদিন স্বআগ্রহে প্রতিবাদ করতে ইতিপূর্বে দেখা যায়নি।
কুমারখালী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ থেকে বিশিষ্ট আলেম মাওলানা জুলফিকার আলীকে অন্যায় ভাবে বিদায়, দূর্গাপুর গোরস্থান মসজিদের ইমাম মাওলানা নূর মোহাম্মদকে জুমার নামাজের আগ মূহুর্তে গ্রেফতার করা হলেও তারা কোন প্রতিবাদ করেনি। সোন্দাহ মসজিদের কমিটিতে উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী থাকায় তার উপরে অভিযোগের তীর বেশি উঠেছে। ইমাম আদনানের ফেসবুক পোষ্টের ফলে আলেমদের দ্বন্দ চলে এলো প্রকাশ্যে।
উল্লেখ্য, সারা দেশের মত কুমারখালীতেও নির্ভৃতে কওমী – আলিয়া দ্বন্দ বিরাজমান। সাম্প্রতিক বছরে উপজেলায় কওমী মাদ্রাসা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন মসজিদে কওমী আলেমরা চাকরী বাড়িয়েছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী সোন্দাহ মসজিদের ঘটনাকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা শান্তিতে সহঅবস্থানে বিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন।

আরও খবর

Sponsered content