ধর্ম

‎বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব‎

বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। স্মরণকালের ভয়াবহ অবস্থা; ফেনী কুমিল্লা নোয়াখালী চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি ও বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বহু এলাকা বন্যা কবলিত। লাখও নারীপুরুষ ও শিশু কিশোর এ মুহূর্তে পানিবন্দি। সকলের মুখে শোনা যাচ্ছে, বাঁচার জন্য হাহাকার। প্রাণে বেঁচে থাকার আকুতি। তারা বলছেন, আমাদেরকে আগে উদ্ধার করুন। খাদ্যের প্রয়োজন নেই।

আগে আমাদেরকে বাঁচান। বাসা বাড়ি সব ডুবে একাকার। ঘরের টিনের চালেও আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন। এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির শিকার তারা বিগত ত্রিশ চল্লিশ বছরেও হননি বলে অনেকে জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সচিত্র অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভাইবোনকে রক্ষা করুন। উদ্ধার কাজে আমাদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণের তাওফিক দান করুন।

যারা অংশ গ্রহণ করছেন তাদেরকেও উত্তম প্রতিদান দান করুন। গতকালও আমাদের এই ভাইয়েরা জানতেন না যে, আজকে তাদের কী অবস্থা হবে? কী পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে তাদেরকে? জানতেন না যে, লড়তে হবে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। এ মুহূর্তে আমাদের জন্য পানিবন্দি বন‌্যাগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এর চেয়ে মানব কল্যাণ আর কী হতে পারে?

এজন্য জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে গণমানুষের কল্যাণে আমাদেরকে এগিয়ে আসা উচিত এখনই। সব রকমের ভেদাভেদ ভুলে মানবতার কল্যাণে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন, আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই!  তোমরা কল্যাণ ও খোদাভীতির কাজে একে অপরের সহযোগী হও। ( সুরা মায়েদা : ০২)

আর হাদিসের আলোকে কল্যাণ হচ্ছে, গোটা মুসলমানদের জন্য কল্যাণ কামনা করা। আজকে বন্যায় প্লাবিত আমার মুসলিম ভাই ও বোন। তাদের উদ্ধার কাজে সাহায্য সহযোগিতা করা। দয়ার হাত প্রসারিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।  হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করেন না। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’।(সহি বুখারি)

এ হাদিসের শিক্ষা হলো, মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা, প্রকারান্তরে আল্লাহ তাআলার দয়া অনুগ্রহ লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বন্যা কবলিত অসহায় মানুষেরা আমাদেরই ভাইবোন। আমাদেরই দেহের একটা অংশ।  হজরত নুমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সকল মুমিন এক ব্যক্তির মতো, যদি তার চক্ষু অসুস্থ হয়। তখন তার সর্বাঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয়, তখন তার সমস্ত শরীরই ব্যথিত হয়।’ (-সহি মুসলিম)

কাজেই আমাদের এ-সব বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে আসা ঈমানী দায়িত্বও বটে। যা ইসলামের চিরন্তন একটি শিক্ষা। আমাদের উচিত তাদের পাশে সাধ্যমতন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।  হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে। আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।’ (সহি বুখারি ও মুসলিম)  আজ যদি আমরা আমাদের এই মুসলমানদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াই। অর্থ কড়ি সময় দিয়ে। কিংবা কোনো সুচিন্তিত বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমেও।

তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কিয়ামতের দিন এর সঠিক বিনিময় ও প্রতিদান দান করবেন। অবশ্যই এই ভালো কাজের বিনিময়ে হতে পারে আমরা জান্নাতের নেয়ামত লাভ করব। আল্লাহ তাআলা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াবার সৎসাহস ও তাওফিক দান করুন।

আরও খবর

Sponsered content