Uncategorized

আধুনিক যুগেও পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

ঘোড়ার গাড়ি গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অংশ। যান্ত্রিকযানের কবলে সেই ঐহিত্য প্রায় হারাতে বসেছে। এখন গ্রামে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন নেই বললেই চলে। এর প্রচলন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ ঘোড়ার গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন।কিন্তু এ ঘোড়ার গাড়িই পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার বিশাল এলাকাজুড়ে জেগে ওঠে চর।

পানি কমে যায় পদ্মা নদীর। একে তো রাস্তাঘাট নেই, তার ওপর আবার গাড়ি, রিকশা, অটো কিংবা মাইক্রোবাসও চলাচল করতে পারে না চরাঞ্চলে। এ সময় ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে চলাচল ও পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে ঘোড়ার গাড়ি। নিত্য ও কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে যাতায়াত ও অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয় সেখানে।

পদ্মা ঘিরে রেখেছে সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুর, চর মানাইর, ঢেউখালি ও নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নকে। শুকনো মৌসুমে এ অঞ্চলে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। এমন একসময় ছিল যখন কোনো পরিবহন না থাকায় মানুষকে হেঁটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে উত্তপ্ত দীর্ঘ বালুচর পাড়ি দিতে হতো। নিত্যপণ্যের বোঝা মাথায় করে চরে বালু ও হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে হাঁটতে হতো।

তবে ঘোড়ার গাড়ি চালু হওয়ার পর এ কষ্ট থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলেছে তাদের।প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চালানো জীবিকা নির্বাহের নতুন এক উপায় হয়ে উঠেছে অনেকের। বর্ষা মৌসুমে চরের মানুষ নৌকায় যাতায়াত করতে পারে। তবে রাস্তাঘাট না থাকার কারণে শুকনো মৌসুমে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এ ঘোড়ার গাড়িই মুক্তি দিয়েছে যাতায়াতের এ সমস্যা থেকে।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কৃষিসহ নিত্যপণ্য পরিবহন করছেন ঘোড়ার গাড়িতে। অসুস্থ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে এ গাড়ি। চরাঞ্চলের মানুষের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমও হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি।সদরপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়ার চরাঞ্চলের একজন ঘোড়ার গাড়ি চালক বলেন, পদ্মার চরাঞ্চলে সবসময় বিভিন্ন ধরনরে ফসলের চাষ হয়।

এসব ফসল বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘাটে পৌঁছে দেই। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে দৈনিক আমার ১০০০ টাকা আয় হয়। ঘোড়াকে খাওয়াতে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৩০০ টাকা, বাকি যে টাকা থাকে এটাই আমার উপার্জন।আরেক ঘোড়ার গাড়িচালক রাজা মিয়া বলেন, ঘোড়ার গাড়ি চরে সব সময় চলে না। যখন পদ্মা নদীতে পানি কম থাকে তখন এ গাড়ি দিয়ে মানুষসহ বিভিন্ন মালামাল বহন করা হয়।

মে মাসের শেষের দিকে নদীতে পানি চলে আসলে আমাদের ঘোড়ার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।পদ্মার চরের একজন ধনিয়া চাষি বলেন, আমি এবার ৮ একর জমিতে ধনিয়া চাষ করেছি। এসব ধনিয়া চর থেকে ঘাটে আনার জন্য বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র উপায়। ঘোড়ার গাড়ি না হলে ঘাটে কোনো ফসল আনা যায় না।

নারিকেল বাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এ মৌসুমে পদ্মা নদীর পানি অনেকটা কম থাকার কারণে আমাদের ইউনিয়নের পদ্মার চরগুলো জেগে ওঠে। ফলে চর থেকে ঘাটে যাতাযাত করা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র বহন করার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠে ঘোড়ার গাড়ি।

যেকোনো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কাজেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হাঁটুপানি থাকলেও অনেক সময় পানির মধ্যে দিয়েও ঘোড়ার গাড়ি চলে যেতে পারে।