লাইফ স্টাইল

প্লাটিলেট বৃদ্ধিসহ রক্তস্বল্পতা পূরণ মহৌষধি ডালিমের যত গুণাগুণ

বেদানা বা ডালিম, লাল রঙের এই ফলটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি ফল। গোটা দানাসহ বা রস করে খাওয়া যায় মজাদার এই ফল। শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য গুণাগুণেও ভরপুর ডালিম।

ডালিমের পুষ্টিগুণ : ডালিম ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল। সাধারণত একটি ডালিমের মধ্যে ক্যালোরি ২৩৪, প্রোটিন ৪.৭ গ্রাম, চর্বি ৩.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৫২ গ্রাম, ফাইবার ১১.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ৩২%, ম্যাগনেসিয়াম ৮%, ফসফরাস ৮% এবং পটাসিয়াম ১৩% থাকে।

ডালিমের উপকারিতা

১. অক্সিড্যান্টে ভরপুর : ডালিম হল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনলিক যৌগের বিশ্বস্ত উৎস, যার মধ্যে রয়েছে পুনিকাল্যাগিনস, অ্যান্থোসায়ানিন এবং হাইড্রোলাইজেবল ট্যানিন। এসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি মানব শরীরের কোষগুলিকে ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

উচ্চ পরিমাণে ফ্রি র‌্যাডিকেল মানবদেহের জন্য অনেক ক্ষতিকারক এবং এর কারণে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ডালিমের রস খেলে ফ্রি র‍্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

২. প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে : দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারসহ নানারকম রোগ হতে পারে। ডালিমের রস দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ডালিমে থাকা পুনিকাল্যাগিনস নামক উপাদানের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

এ ছাড়া গবেষণায় জানা গেছে যে ডালিমের রসে থাকা এসব উপাদান দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণ চিহ্নিত করে তা হ্রাস করতে পারে।

৩. ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে : রিসার্চ ট্রাস্টেড সোর্সের গবেষণা অনুযায়ী ডালিমে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগগুলিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া আরও জানা গেছে যে যে ডালিমের রস লিভার ক্যান্সারের টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ের বৃদ্ধিকে ধীরগতি করে দেয়। এ ছাড়াও, ডালিমের নির্যাস প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী।

৪. হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে : ডালিমের মত পলিফেনলিক যৌগ সমৃদ্ধ ফল হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার পাশাপাশি হৃদরোগ প্রতিরোধে উপকারী ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডালিমের রস পান করলে বুকে ব্যথার তীব্রতা কমে যায়।

৫. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে : ডালিমের থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনলিক যৌগগুলি ক্ষতিকারক অণুজীবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। এতে থাকা উপাদানগুলো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ইস্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে মুখের জীবাণু যা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করে থাকে।

৬. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে : ডালিমের মধ্যে রয়েছে এলাজিটানিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে এলাজিটানিন অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমিয়ে, মস্তিষ্কের কোষের বেঁচে থাকা বৃদ্ধি করে যা আলঝেইমার এবং পারকিনসন রোগের বিরুদ্ধে মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া এলাজিটানিন অন্ত্রে ইউরোলিথিন এ নামক একটি যৌগ তৈরি করে যা মস্তিষ্কে প্রদাহ কমিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।

৭. হজম শক্তি বাড়ায় : ডালিম উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল যা হজম শক্তির বৃদ্ধিতে অপরিহার্য উপাদান। ডালিমের মধ্যে থাকা প্রিবায়োটিক প্রভাবের কারণে ডালিম অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়াতে পারে। এ ছাড়া প্রিবায়োটিকগুলি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

৮. ত্বকের জন্য উপকারী : ডালিমের রসে থাকা অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট অভ্যন্তরীণ সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে, ত্বককে ভেতর থেকে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ত্বকের কোলাজেন ঠিক রেখে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

৯. প্লাটিলেট বৃদ্ধি ও রক্তস্বল্পতা দূর করে : ডালিম রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে। এছাড়া ডালিম শরীরের দুর্বলতা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে। এ ছাড়া ডালিমে থাকা আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে। নিয়মিত ডালিমএররস খেলে খুব দ্রুত রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে এবং রক্তস্বল্পতা দূর হয়