সারা দেশ

প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর পথে আ.লীগ নেতার হাতে ধর্ষণের শিকার

প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর পথে আ.লীগ নেতার হাতে ধর্ষণের শিকার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রেমিককে বেঁধে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও তার বন্ধুরা। শুক্রবার রাতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার প্রেমিক বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ।

নির্যাতিতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মেয়েটির বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুরে। বেশ কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।শুক্রবার তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে দোয়ারাবাজারের কামারগাঁওয়ে ছেলেটির বন্ধু আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজারের আজমপুর খেয়াঘাটে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুল করিম তাদের আফাজ উদ্দিনের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলে। রাতে জালালপুর গ্রামের ভেতর গিয়ে আবদুল করিম অটোরিকশায় গ্যাস নেই জানিয়ে তাদের নামিয়ে দেয় এবং মান্নারগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক আফছর উদ্দিনকে ডেকে আনে।

এ সময় আফছর তাদের মারধর ও পুলিশে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায়। ভয়ে ওই তরুণ বন্ধুর বাবা মিয়াজান আলীকে ফোন দেয়। মিয়াজান আলী ঘটনাস্থলে এলে তাঁকেও আফছর ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাত ১টার দিকে দু’জনকে জালালপুরের ময়না মিয়ার ছেলে ফয়জুল বারীর একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় উভয়ের মোবাইল ফোন ও আট হাজার টাকা।

এক পর্যায়ে ছেলেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আফছর ও তার বন্ধু ফয়জুল বারী, কামারগাঁওয়ের আবদুল করিম ও জালালপুরের ছয়ফুল ইসলাম মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে।ঘটনার পর ভোরে অসুস্থ কিশোরী ও তার প্রেমিককে আবার করিমের অটোরিকশায় তুলে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয় আফছর। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কাটাখালী বাজারের কাছে এসে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের নেমে পেছন থেকে ধাক্কা দিতে বলে করিম।

ওই তরুণ ও কিশোরী নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য যেতেই করিম দ্রুত অটোরিকশা নিয়ে সটকে পড়ে। পরে সকাল পর্যন্ত স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় ওই কিশোরী ও তার প্রেমিক। সকালে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলীর সহযোগিতা চায় তারা। সিকান্দার আলী শনিবার দুপুরে দু’জন ইউপি সদস্যকে বিষয়টি জানালে তারা পুলিশে খবর দেন। বিকেলে পুলিশ এসে নির্যাতিতা ও তার প্রেমিককে তাদের হেফাজতে নেয়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা আফছরসহ অভিযুক্ত চারজনের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, নম্বর বন্ধের আগে তাদের কাছে ফোন করে নিজেকে রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছে আফছর।সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস জানান, খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা নির্যাতিতা ও তার প্রেমিকের বক্তব্যও শুনছেন।

রাতেই নির্যাতিতা কিশোরী আফসরসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করে।এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এদিকে ঘটনার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল খালেক বলেন, এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।