সারা দেশ

স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে তালা মেরে দেওয়ার অভিযোগ

স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে তালা মেরে দেওয়ার অভিযোগ

ফরিদপুর-৩ আসনে প্রতিপক্ষের হামলা ও হুমকিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণসহ দুইটি ক্যাম্প ভাঙচুর ও একটি ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে তার ঈগল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত একাধিক স্থানে মোটরসাইকেলের দলবদ্ধ মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে।এর আগে মামুদপুরে হামলা করে আহত করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে। শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর সময় তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়।বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো নির্বাচনী মিছিল বা প্রচারণা বের হলে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তাদের আশেপাশে মহড়া দিচ্ছে হেলমেট পরিহিতরা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের লোকেরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।এর মধ্যে একটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।অভিযোগ উঠেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর স্কুলের সামনে এ কে আজাদের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত নায়েব আলীর ভাই সাহেব আলী কোমর থেকে পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড গুলি চালান। একই দিনে ঈশান গোপালপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কাম্প ভাঙচুর করা হয়। একই ইউনিয়নের লক্ষীদাশের হাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেকটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে বাঁশ-খুটি উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ওমেদিয়া বাজারে একটি দোকানে স্থাপন করা স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে সেটি আর না খোলার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডে রাতের আঁধারে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি পটকা ফুটিয়ে কর্মীদের হাতে থাকা লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রাসুল তানিয়া বলেন, আমরা ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বের হয়েছিলাম।

আলীপুরের রাজ্জাকের মোড়ে আমরা উপস্থিত হলে প্রতিপক্ষ শামীম হকের সমর্থকরা প্রায় ৩০-৪০টা মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে। ওই এলাকায় এ কে আজাদের কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারবো না বলে আমাদের চলে যেতে বলা হয়। এ সময় আমাদের কাছে থাকা ঈগল মার্কার লিফলেট ছিনিয়ে নেন তারা। এছাড়া চুমকি নামে একজন নারী নেত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মামুদপুর এলাকায় এ কে আজাদের সমর্থক রনি মোল্যা ও কাইয়ুম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহত রনি মোল্লাকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।কাইয়ুম মোল্যা বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই এ কে আজাদ চাচার সমর্থক। আমার বাবা নান্নু মোল্লা এই সেন্টার কমিটির সভাপতি। আমরা ঈগল মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে আমার বড় ভাইয়ের মুদি দোকান খুলতে গেলে স্থানীয় মোস্তফার নেতৃত্বে আজাদ, আসাদ ও চুন্নু আমাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন।

তারা এ সময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলতে থাকেন, তোরা আর আজাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবি না। এখন থেকে নৌকার প্রচারণা করবি। তা না হলে তোদের মেরে ফেলবো বলে আমাকে পেটানো হয়। একপর্যায়ে আমার ভাই রনি আমাকে বাঁচাতে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। আমার ভাই রনি এখন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। হামলার ঘটনার নেতৃত্বে থাকা মোস্তফা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের ভাতিজা বলেও জানান কাইয়ুম।

এ বিষয়ে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী সমন্বায়ক শোয়েবুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছি। আমরা আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ না। ফরিদপুর ৩ আসনে আমাদের প্রচার-প্রচারণায় যেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমাদের সমর্থকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে কম যাবে। আমরা চাই সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি আনন্দমুখর নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের প্রতিপক্ষ হামলা ভাঙচুর বন্ধ করুক।

আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও সুদৃষ্টি কামনা করছি।ঈশান গোপালপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, ভাঙচুর বা নির্বাচনী ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা কোথাও ঘটেনি। এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের অফিসারইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাতে মামুদপুর এলাকার ঘটনায় দুইটি মামলায় অভিযুক্ত দুই গ্রুপের চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটকরা হলেন, একে আজাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মুন্নু মোল্লা (৫৫) ও রনি মোল্লা (৩৭)। অপরদিকে নৌকা সমর্থিত শামীম হকের গ্রুপের আজাদ মোল্লা (৩০) ও আসাদ মোল্লা (৩৫)। তবে অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে লিখিত বা মৌখিকভাবে কেউ অভিযোগ করেননি।