6 December 2023 , 2:53:42 প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসওর মধ্যে দফায় দফায় ফের সংঘর্ষ-গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে একদিনে পৃথক ৩ গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোলাগুলিতে দুদলের তিনজন, একই সময়ে অপর এক স্থানে আরএসও সোর্স সন্দেহে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা এবং এর আগে দুপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে অপর একজন রোহিঙ্গা নিহত হন।
রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসও গোলাগুলিতে নিহতরা হলেন- উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৫ ব্লক জি/৩ এর কামাল উদ্দিনের ছেলে জয়নাল উদ্দিন (২৭), ক্যাম্প-১৭ এর আবুল বশরের ছেলে আবুল কাসেম (৩০), ক্যাম্প-১ ইস্ট ব্লক-জি/১২ এর মনি উল্লাহর ছেলে ইমাম হোসেন (৩০) এবং ক্যাম্প-১৫ ব্লক জি/৬ এর মো. শফিকের ছেলে আনোয়ার সাদেক (১৭)।
পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মঙ্গলবার রাত ৮টার পর থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৫ এর জি/৩ ব্লকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বাহিনীর প্রায় ৩০-৪০ জনের দল জড়ো হয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হন। এই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা গোলাগুলি চলে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে এপিবিএনের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ঘটনাস্থল থেকে দুগ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে।অপরদিকে, একই সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৭ এর সি/৭৭ ব্লকে আরসা সন্ত্রাসী ১০/১২ জনের একটি দল আবুল কাসেম নামের একজন সাধারণ রোহিঙ্গাকে আরএসওর সোর্স সন্দেহে মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
তার আগে দুপুর আড়াইটার দিকে কুতুপালংয়ের ৪ নম্বর ক্যাম্পের এফ/১৬ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে ক্যাম্প-১ ইস্ট এর জি/১২ ব্লকের মনি উল্লাহর ছেলে ইমাম হোসেন (৩০) নিহত হন। গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসাইন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উদ্ধার ও সুরতহাল তৈরি হয়েছে। এসব মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করতে এপিবিএনের পাশপাশি অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৮ মাসে আশ্রয়শিবিরে ৬০ টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৭৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ২২ জন আরসার সদস্য, ৬ জন আরএসওর সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।