খেলাধুলা

আবারও টেস্টে নতুন প্রজন্মের সাফল্য

সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাগুরা থেকে নাজমুল হোসেন শান্তকে ফোন করেন সাকিব আল হাসান। সেঞ্চুরি করায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ককে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি টুকটাক পরামর্শও দেন তিনি। জাতীয় দলের অনুজকে বলেছিলেন, ৩০০ রানের একটা লিড দাঁড় করাতে। আরও বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডকে হারাতে তিনশ রানই যথেষ্ট।

নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছয় উইকেট নিয়ে শুধু ডিফেন্ড করেননি, বড় জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। যে জয়কে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও দেখছেন বড় অর্জন হিসেবে। দেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন প্রজন্মের উত্থান দেখছেন তারা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা টেস্ট। এই আঙিনা ২৩ বছর বিচরণ করেও সেভাবে সাফল্য পায়নি। তাই হঠাৎ হঠাৎ এক-দুটি জয় আলোড়ন ফেলে দেয়। যেমন দিয়েছিল মুমিনুল হকদের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সেই নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারানোকেও বলা হচ্ছে ঐতিহাসিক। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মতে, ‘আমার দৃষ্টিতে এটি ঐতিহাসিক টেস্ট জয়।

দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলকে হারিয়েছে। পুরো দলই ভালো ক্রিকেট খেলেছে। এই ছন্দ ধরে রেখে সিরিজ জিততে চাই।বিশ্বকাপের ভরাডুবি টালমাটাল করে দিয়েছিল দেশের ক্রিকেট। নিন্দার ঝড় উঠেছিল চারদিকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাওয়া জয় সে ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেবে বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। তাঁর মতে, ‘আমি মনে করি, এটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য, ক্রিকেটারদের জন্য অক্সিজেন।

বিশ্বকাপের পর আমাদের খেলোয়াড়দের মনমানসিকতা একটু ‘ডাউন’ হয়ে গিয়েছিল। সেই খেলোয়াড়রা নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে প্রভাব বিস্তার করে জিতেছে।তিটি দিন ভালো খেলেছে। দুই ইনিংসে তিনশ প্লাস রান করেছে। বোলিংও ভালো করেছে। বিশ্বকাপ যেভাবে সবাইকে মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছিল, সেটাকে চাঙা করবে এ জয়।টেস্ট ম্যাচ শেষ করে গতকালই ঢাকায় ফেরেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তিনি আবার বিশ্বকাপের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটকে মেলাতে চান না। তাঁর মতে, ‘বিশ্বকাপের ক্ষত থাকবে।

কিন্তু টেস্ট জয় অনেক বড় বিষয়। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট জয় কত বড় অর্জন, সবাই তা বুঝতে পারছে কিনা, জানি না। খুবই ভালো ক্রিকেট খেলা হয়েছে। স্পোর্টিং ট্র্যাকে খেলা হওয়ায় দু’দলের জন্যই সমান সুবিধা ছিল। আমার মনে হয়, সব বিভাগেই খুব ভালো খেলেছে। শান্তর সেঞ্চুরিটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। মুশফিক এবং মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি লিড নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুভূতি।

বিকেএসপির সাবেক ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, ‘আমার মনে হয়, এই টেস্ট জয় আমাদের ইমেজকে অনেকখানি পুনরুদ্ধার করবে। কারণ, পূর্ণশক্তির নিউজিল্যান্ড দলকে হারিয়েছি। এ ছাড়া এমন উইকেটে খেলা হয়নি, যেখান বল নিচু হয়ে যায়। ব্যাকফুটে খেলা যায় না। সাইড শট খেলা যায় না। রান করাই যায় না। এগুলো বিবেচনা করলে এটা খুব বড় একটা জয়।’ মিরপুরেও অনুরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখতে চান তারা।

%d bloggers like this: