সারা দেশ

রাজশাহীতে নৌকা পেয়েও বিদ্রোহীদের কারণে আতঙ্কে থাকবেন প্রার্থীরা

রাজশাহীতে নৌকা পেয়েও বিদ্রোহীদের কারণে আতঙ্কে থাকবেন প্রার্থীরা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন রাজশাহীর ৪১ নেতা। তাঁদের মধ্যে ৬টি আসনে রোববার ৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে বাদ পড়েছেন ৩৫ জন। যাঁদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন হলেন প্রভাবশালী নেতা। তাঁরা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের উজ্জিবিত করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে তিনজন এমপিও রয়েছেন। এই তিন এমপির মধ্যে একজন রাজশাহীর ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর সেটি হলে চরম পরীক্ষা দিতে হবে নৌকার প্রার্থীদের। এমনকি আতঙ্কেও আছেন কেউ কেউ। অবস্থাদৃষ্টে এমন যে, জনপ্রিয়তা হারিয়ে নৌকা পেলেও বিদ্রোহীদের দাপটে ভরাডুবি হবে বর্তমান এমপিদের মধ্যেও কারো কারো।

দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে মোট মনোনয়ন তুলেছিলেন ৮ জন। এর মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও নানা কান্ডে বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী। কিন্তু এ মনোনয়ন প্রত্যাক্ষণ করে এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তানোরের মন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আয়েশা আক্তার ডালিয়া, চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি, ও গোদাগাড়ীর দেউপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা তিনজনই।

গোলাম রাব্বানী বলেন, দল থেকে স্বতন্ত হয়ে নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি বলে দেওয়া হয়েছে, যে জিতবে সে আমাদের। কাজেই আমি নির্বাচনে অংশ নিব। তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষকে ফারুক চৌধুরির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করবো।রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছিলেন আওয়ামী লীগের ৬ নেতা। তাঁদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। গতকাল পর্যন্ত এ আসন থেকে শুধুমাত্র তিনিই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখানে গত তিনবার সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মহাজোটের প্রার্থী ও ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে আর মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ফজলে হোসেন বাদশাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক দেওয়া হলে এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদ।

বিষয়টি রায়হান গতকাল নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমপি ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীর জন্য কিচুই করতে পারেননি। তাঁকে যদি আবার জোটের হয়ে নৌকা তুলে দেওয়া হয়, তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি আয়েনসহ ৬জন। তাঁদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। তবে আয়েন এ প্রসঙ্গে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। তার ঘোনিষ্টজনরাও অস্বীকার করেছেন।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি ও বহুল বিতর্কিত আওয়ামী লীহগ নেতা এনামুল হকসহ ৫ জন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। মনোনয়ন হয়ে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন এনামুল হক-এমনটিই তাঁর ঘোনিষ্টজনরা প্রচার করছেন এলাকায়। এনামুল হক নিজেও ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাজড়ি কণ্ঠে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এসময় বলেন, ‘আমি বাগমারা বাসীর সঙ্গে থাকতে চাই, তাদের সঙ্গে আছি, থাকবো।রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি মুনসুর রহমানসহ ৮ জন।

তাদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে। তবে এ আসন থেকে স্বতন্তপ্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনকি সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। দারাকে দিয়ে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের কোনো উন্নয়ন হবে না।মাসুদ বলেন, ‘দল স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আমি পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসীর জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ৫ জন।

তাঁদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন শাহরিয়ার আলম। এর প্রতিবাদে সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি রায়হান গতকাল সোনালীনিউজকে নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, শাহরিয়ার আলম বাঘা-চারঘাটের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। এলাকায় তার কোনো অবস্থান নাই। আমি সেখান থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্ধার করতে চাই। বাঘা-চারঘাটবাসীও আমাকে চাইছেন।