খেলাধুলা

চুক্তি বাতিল ডাচ ফুটবলারের ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায়

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই সেখানে মৃত্যুবরণ করছেন হাজার-হাজার নিরীহ মানুষ। সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালও। বিশেষ করে প্রতিদিন শিশুদের মৃত্যু নাড়া দিয়ে গিয়েছে সর্বস্তরের মানুষকে। সবাই যার যার জায়গা থেকে ইসরায়েলের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ক্রীড়াঙ্গনও তার বাহিরে নয় ফুটবলে এই যুদ্ধের প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়তে শুরু করেছে।

মুসলিম ফুটবলারদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি ফিলিস্তিনের সমর্থনে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু এই মুখ খোলাই কাল হয়ে দাঁড়াল জার্মান বুন্দেসলিগায় খেলা ডাচ ফুটবলার আনোয়ার এল ঘাজির। ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় তার সাথে চুক্তি বাতিল করেছে জার্মান বুন্দেসলিগার ক্লাব মেইঞ্জ।জার্মান ফুটবল ক্লাব মেইঞ্জ ০৫ শুক্রবারে (০৩ নভেম্বর) ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সম্পর্কিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের জন্য আনোয়ার এল ঘাজির চুক্তি বাতিল করে।

বিবৃতিতে অবশ্য মেইঞ্জ বলে যে এল গাজির চুক্তি “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খেলোয়াড়ের ক্লাবের স্বার্থবিরোধী মন্তব্য এবং পোস্ট এর কারণে বাতিল করা হয়েছে” কী ধরনের পোস্ট এই সম্পর্কে অবশ্য আর কোনো তথ্য তারা সরবরাহ করেনি।২৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সম্পর্কে একটি পোস্টের জন্য ক্লাব দ্বারা সাসপেন্ডেড হয়েছিল, তবে পরে ওই পোস্ট মুছে ফেললে এই সপ্তাহের শুরুতে তাকে আবার অনুশীলনে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

ক্লাব তার চুক্তি বাতিলের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে তিনি বলেন, “যা ঠিক তার পক্ষে দাঁড়ান, এমনকি যদি এর অর্থ হয় একা দাঁড়ানো। গাজায় নিরপরাধ এবং দুর্বলরা যে নরকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে তার তুলনায় আমার জীবিকার ক্ষতি কিছুই নয়।অবশ্য ২৭ অক্টোবর ক্লাব দ্বারা সাসপেন্ডেড হওয়ার পর একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি স্পষ্ট করে বলেন “সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার আগের বিবৃতিগুলোকে যতটা ভুল বোঝানো হয়েছে, আমি স্পষ্ট করতে চাই যে আমি সবসময় সবার জন্য শান্তি এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছি।

মেইঞ্জ সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিবৃতিতে বলেছিল যে তারা ঘাজির স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে এবং তাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছে, তিনি বলেছেন যে তিনি হামাস সহ সব ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং ইসরায়েলের রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তোলেননি।তবে এরপর আবার বুধবার আরও একটি সামাজিক মিডিয়া পোস্টে, এল ঘাজি ইঙ্গিত দেন যে ক্লাবটি তার অনুমতি ছাড়াই এই বিবৃতি জারি করেছে।নি সামাজিক মাধ্যমে এরপর লেখেন যে “আমি আমার অবস্থানের জন্য অনুশোচনা করি না। আমি যা বলেছি তা থেকে আমি কখনোই নিজেকে দূরে রাখি না এবং আমি আজ এবং সর্বদা আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত, মানবতা এবং নিপীড়িতদের জন্য দাঁড়িয়ে আছি এবং থাকব।

তিনি আরেকটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন যেখানে তিনি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সকল নিরপরাধ নাগরিকদের হত্যার নিন্দা করেছেন। গত তিন সপ্তাহে গাজায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। আমি এবং আমরা বিশ্ব হিসেবে বিবেকবানভাবে কখনোই নীরব থাকতে পারি না। আমাদের এখনই গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানাতে হবে” তিনি তার পোস্টে এটি যোগ করেন।

শুক্রবার এল ঘাজির চুক্তি বাতিলের আগে, জার্মান প্রসিকিউটররা তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলির মাধ্যমে ‘ঘৃণার প্ররোচনার সাথে অপরাধমূলক কাজ দ্বারা জনসাধারণের শান্তিকে বিঘ্নিত করার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন।ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ায় অবশ্য এ্রল ঘাজি ছাড়াও আরেক ফুটবলার তার ক্লাব দ্বারা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি হলেন ফ্রান্সের লিগ ওয়ানের ক্লাব নিসে খেলা আলজেরিয়ান প্লেয়ার ইউসেফ অটল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তথাকথিত ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য রি-পোস্ট করায় আজ আলজেরিয়ান ফুটবলার ইউসেফ অটলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করেছে ফরাসি ক্লাব নিস।