বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এবার ইসরোর পরবর্তী টার্গেট সূর্য

৪০ দিনের যাত্রা শেষে বুধসন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর এই যান। চাঁদে আপাতত ১৪ দিন কাজ চালিয়ে যাবে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ এবং রোভার ‘প্রজ্ঞান’। ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চাঁদের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছিল এই মহাকাশযান।

চন্দ্রজয়ের পর থেকে ভারত জুড়ে খুশির বন্যা। খুশি ছড়িয়ে পড়েছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের মধ্যেও। হাসি-কান্নায় ইতিহাস তৈরির মুহূর্ত উদ্‌যাপন করেছেন তাঁরা।চন্দ্রযান-৩ তো সফল হয়ে গেল। কিন্তু এর পর কী? আপাতত এই চিন্তায় ঘুরছে দেশবাসীর মাথায়। খুশির খবর হল, চন্দ্রযান-৩-এ থেমে যাবে না ইসরোর ইতিহাস গড়ার যাত্রা। হাতে রয়েছে একাধিক পরিকল্পনা।

ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্প নিয়ে মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারের প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারত। মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চায় আরও এগিয়ে যেতে তেড়েফুঁড়ে কাজ শুরু করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।আপাতত ভারত যে মহাকাশ অভিযানগুলি নিয়ে জোরকদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম আদিত্য-এল-১। ইতিমধ্যেই সেই অভিযান নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে।

ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমানাথ জানিয়েছেন, আদিত্য-এল-১ উপগ্রহটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা হবে। শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশের উদ্দেশে উড়ে যাবে উপগ্রহটি।সোমনাথ জানিয়েছেন, সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আদিত্য-এল-১ উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানো হবে। প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে সেটি। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন।

আদিত্য-এল-১ হতে চলেছে ভারত থেকে সূর্যের দিকে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। ইসরো জানিয়েছে, মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবীর মধ্যে একটি ‘হ্যালো’ কক্ষপথের এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে।সূর্যের অপর নাম আদিত্য। তাই কৃত্রিম উপগ্রহটির এই নাম রাখা হয়েছে। উপগ্রহটিকে মহাকাশে বহন করে নিয়ে যাবে ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)।

আদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। এই অভিযান সফল হলে সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে ইসরো। পাশাপাশি সূর্যের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবও বুঝতে সাহায্য করবে এই উপগ্রহ।আদিত্য-এল-১-এর পাশাপাশি আরও এক স্বপ্নের মহাকাশ অভিযান নিয়ে ইসরোর অন্দরে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইসরোর ইতিহাসে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাকাশ অভিযানের নাম ‘গগনযান’।

‘গগনযান’-ই হতে চলেছে মহাকাশের গভীরে ভারতের প্রথম মানব অভিযান। ২০২৪ সালে এই মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছে ভারতের এই মহাকাশযান।মানববাহী মহাকাশযান পাঠানোর আগে পরীক্ষার জন্য দু’টি মানবহীন যানও মহাকাশে পাঠাবে ইসরো। মূল অভিযানের আগে মানবহীন যান দু’টির উদ্দেশ্য সুরক্ষা এবং নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করে দেখা৷

গগনযানের বাজেট ৯,০২৩ কোটি টাকা। যদি অভিযান সফল হয়, তা হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পে ভারতের অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেই মনে করছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।পাশাপাশি, ২০২৪ সালে আমেরিকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাডার নিসার (নাসা-ইসরো অ্যাপারচার র‌্যাডার) পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনগুলি বোঝার জন্য পৃথিবী কক্ষপথে এই রাডারটিকে পাঠানো হবে। অভিযানে মোট খরচ হবে প্রায় ১২,২৯৬ কোটি টাকা।

২০২৪ সালে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে ইসরো। এই অভিযানের নাম মঙ্গলযান-২। তবে এই অভিযানে কত খরচ হচ্ছে তা নিয়ে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ইসরোর শুক্রযান-১-এর প্রস্তুতি। শুক্রগ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতেই এই অভিযানের পরিকল্পনা করছে ইসরো। এতে খরচ হবে ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা।

%d bloggers like this: