10 September 2024 , 12:20:00 প্রিন্ট সংস্করণ
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বলা যায় একটি দিনও চলে না আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া। কতটা জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া- চলুন এ সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য জেনে নেয়া যাক। সাম্প্রতিক (জুলাই ২০২৪ এর) তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫.১৭ বিলিয়ন (৫১৭ কোটি)।
সংখ্যাটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৩.৭ শতাংশ। প্রতি বছর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৫.৮ শতাংশ হারে এবং বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশই প্রতি মাসে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, একজন অ্যাভারেজ ব্যবহারকারী প্রতি মাসে গড়ে ৬.৭টি ভিন্ন ভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে। একজন ব্যবহারকারী গড়ে প্রতিদিন ২ ঘন্টা ২০ মিনিট সময় ব্যয় করে থাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে।
বাংলাদেশেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা দ্রুত গতিতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাই ৬ কোটি ৩৯ লাখের বেশি। যার মধ্যে গত এক বছরেই ব্যবহারকারী বেড়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখেরও বেশি। তবে উপর্যুক্ত সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেরই থাকে একাধিক অ্যাকাউন্ট। ফলে একটি অ্যাকাউন্ট মানেই একজন স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী এমনটা ভাবা ঠিক হবে না।
তবে তাই বলে সোশ্যাল মিডিয়ার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তার এই সময়ে আজকে চলুন বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ৩টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
ফেসবুক
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও পর্যায়ক্রমে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মেনলো পার্ক-ভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটিরও বেশি।
ব্যক্তিগত ব্যবহার ছাড়াও ফেসবুক গ্রুপকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বিভিন্ন কমিউনিটি। অন্যদিকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তাই এখন নিজেদের ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফেসবুক-ভিত্তিক ব্যবসা বর্তমানে এতোটাই জনপ্রিয় যে, ই-কমার্সের অনুরুপ ‘এফ-কমার্স’ (ফেসবুক কমার্স) নামটি এখন আলাদা একটি পরিভাষা হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়িক কাজে ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের ব্যবহারও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি অনলাইন এডুকেশনেও ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ। এছাড়া ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ফেসবুক মেসেঞ্জারও এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এআই-ভিত্তিক মেসেঞ্জার চ্যাটবট এর কল্যাণে যোগাযোগ এখন অনেক বেশি পার্সোনালাইজড হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, ফেসবুক বর্তমানে মেটা প্ল্যাটফর্মস-এর মালিকানাধীন একটি সোশ্যাল মিডিয়া ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
ইউটিউব
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউব। সারা বিশ্বে ২.৭ বিলিয়ন বা ২৭০ কোটি ব্যবহারকারী প্রতি মাসে সক্রিয় থাকেন গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউবে। চ্যাড হার্লে, স্টিভ চেন এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়াদ করিম ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই প্ল্যাটফর্মটি। ২০০৬ সালে গুগলের মালিকানাধীন হওয়ার পর থেকে ইউটিউবের ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর জনপ্রিয়তাও।
ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনিতি- এমন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে ভিডিও পাওয়া যাবে না ইউটিউবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রচারণামূলক ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং এর জন্যও আদর্শ প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। ব্যবহারকারীদের মতে, ইউটিউবে কোনো একটি পণ্যের ভিডিও দেখার পর সেটি কেনার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
বিগত ১৫-২০ বছরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যে উত্থান হয়েছে সেখানেও ইউটিউব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একদিকে যেমন ইউটিউবকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেল তেমনি প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়ায় সক্রিয় প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। ভিডিও ব্লগ বা ভ্লগ শব্দটির পপুলার কালচারের অংশ হয়ে উঠার পেছনেও ভূমিকা রয়েছে ইউটিউবের।
উল্লেখ্য, ইউটিউবে বর্তমানে ১১ কোটি ৪০ লাখ সক্রিয় চ্যানেল রয়েছে এবং প্রতিদিন ৩.৭ মিলিয়ন নতুন ভিডিও আপলোড করা হয় প্ল্যাটফর্মটিতে। এক একটি ভিডিও গড়ে ৪.৪ মিনিটের হয়ে থাকে- অর্থাৎ প্রতি ৬০ মিনিটে ২,৭১,৩৩০ ঘন্টার ভিডিও কনটেন্ট আলোড করা হয় ইউটিউবে।
ইন্সটাগ্রাম
কেভিন সিসট্রম ও মার্ক ক্রিগারের হাত ধরে ২০১০ সালে মোবাইল চেক-ইন অ্যাপ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ইন্সটাগ্রাম আজকের ইন্সটাগ্রাম হয়ে উঠে মূলত ফটো ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। ২০১২ সালে মেটা প্ল্যাটফর্মস এর মালিকানাধীন হওয়ার পর থেকে ইন্সটাগ্রাম-এর পরিধি ও জনপ্রিয়তা দুটোই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ইন্সটাগ্রামের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি।
ফটো এডিটের জন্য ফিল্টার এবং কনটেন্ট শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগ ও জিওগ্রাফিক্যাল ট্যাগিং এর ব্যবহার- এই ফিচারগুলোই ইন্সটাগ্রামকে ফটো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। বিল্ট-ইন ফিল্টার দিয়ে ফটো এডিট করার পর যথাযথ হ্যাশট্যাগ যুক্ত করে সঠিক ট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই ফটো শেয়ার করা যায় ইন্সটাগ্রামে এবং ফেসবুকের মতো অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও। ফটোর পাশাপাশি এর শর্ট-ফর্ম ভিডিও ইন্সটাগ্রাম রিলসও বেশ জনপ্রিয়।
পৃথিবীর ৩২টি ভাষার সাপোর্ট রয়েছে ইন্সটাগ্রামে। পাশাপাশি খুব সহজে ফটো ও ভিডিও শেয়ার করা যায় বিধায় ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে মার্কেট ট্রেন্ড বোঝার দারুন এক মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্সটাগ্রাম। অনেকেই তাই এখন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন বাজারের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড সম্পর্কে নিজেদের আপডেটেড রাখার জন্য।