সারা দেশ

চিলমারীতে চরাঞ্চলে কাশবনে দর্শনার্থীর ভীড়

কাঁশ বনে শুভ্রতায় শরৎ সেজেছে নতুন উদ্যোমে। নদীর তীরবর্তী মানুষের কাছে কাঁশবন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার। শুধু কৃষকদের কাছে কাঁশবন সমাদিত নয় দর্শনার্থীর কাছে শরৎকে উপভোগ করার জন্য কাশবনের বিকল্প নেই।জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের মনতোলা ও শাখাহাতি চরাঞ্চলের এই কাশবন প্রকৃতির সৌন্দর্য বিলাশেই সীমাবদ্ধ নয় এই কাশের ছন দিয়ে ঘরের ছাউনি, বেড়া এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। কাশের ফুল ঝাড়ু এবং পানের বরজে কাজে লাগে। তাই স্থানীয়রা কাশের বন বিক্রি করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করছেন।

স্থানীয়রা জানান, শরতের এ সময় কাশফুল দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এই চরে ভিড় করেন। শরৎ শেষে যখন পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়, তখন তারা এসব কাশবন বিক্রি করে দেন। এতে যে অর্থ উপার্জন হয়, তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি মরা কার্তিকের অভাবের সময়টুকু পার হয়ে যায়।চিলমারী ইউনিয়নের মনতলা এলাকার রহিচ উদ্দিন বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে কাশবন আছে। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর কাশগাছের ফুল পড়ে গেলে গাছগুলো কেটে আঁটি বাঁধি। এক হাজার আঁটি ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।

একই ইউনিয়নের শাখাহাতি এলাকার শাহাজামাল মিয়া বলেন, ৫ বিঘা বালু জমিতে কাশিয়ার আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পর এমনিতেই জন্ম নেয়। কিছুদিন পরে জমির কাশিয়া বিক্রি করতে পারব। বর্তমানে কাশিয়ার যে দাম তাতে করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় হবে। এতে করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালাতে পারব।চিলমারী ইউনিয়নের মন তোলা এলাকার আবুল হোসেন বলেন, চরাঞ্চলে পরিত্যক্ত বালু জমিতে এমনিই হয় এই কাশিয়া। এর জন্য কোনো টাকা-পয়সা খরচ করে আবাদ করা লাগে না। কাশিয়া ৭-৮ ফুট লম্বা হয়। এর ফুল আড়াই থেকে ৩ ফুট লম্বা হয়। বছরে একবারই কাশিয়া হয়।

কার্তিক মাসে এই কাশিয়া কাটা হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় এক হাজর থেকে দুই হাজার কাশিয়ার আঁটি হয়। গড়ে প্রতি বি জমির কাশিয়া থেকে ১০-১১ হাজার টাকা আসে। কার্তিক মাসে চরে অভাব দেখা দেয়। কাশিয়া বিক্রি করে যে টাকা আসে, তাতে কার্তিক মাসের অভাব পার হয়ে যায়।কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, কুড়িগ্রামের সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলে এখন কাশফুলের সমারোহ। কাশফুলের ইংরেজি নাম ক্যাটকিন। এর আদি নিবাস রোমানিয়ায়। কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। এটি উচ্চতায় ৭-৮ ফুট হয়ে থাকে।

গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশের মূল বেটে খাওয়ানো হয়।ব্যথা বা ফোড়া হলে কাশের মূলের রস তা উপশম করে। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে যেখানে শিল্প-কারখানার ছাই থাকে, সেখানে কাশ জন্ম নিলে পরিবেশ পরিশোধিত হয়। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি হয়।

সরেজমিনে চিলমারীর ইউনিয়নের মনতোলা ও শাখাহাতি চরাঞ্চলের কাশবনে গিয়ে দেখা যায, শরতের অপরূপ বিকেল। থেমে থেমে বৃষ্টি। কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। সাদা মেঘের মিটিমিটি হাসি যেন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে চারদিকে। সাদা কাশফুল শারদ বন্দনায় নিমগ্ন। আর পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের সোনালি আভা যখন কাশের বন ছুঁয়ে গেল, সে এক অপার্থিব সৌন্দর্য!

কাশবন দেখতে আসা সৌরভী জানান থানাহাট এলাকা থেকে ভাতিজা কে নিয়ে এই কাশবন দেখার জন্য এসেছি খুবই ভালো লাগছে।প্রতিবছর এ সময়টায় এখানে আসি নদীর তীরঘেঁষে সাদা কাশের বন হৃদয় দোলায়, মন ভোলায়।চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রতিবছরের কাশিয়া হয়। এতে করে জমির মালিকরা লাভবান হচ্ছেন।

%d bloggers like this: