24 July 2025 , 4:30:04 প্রিন্ট সংস্করণ
সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ধর্মদহ গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। একদিনে একসঙ্গে এতজনের মৃত্যু এর আগে কখনো দেখেননি এই গ্রামের মানুষ। স্বজনদের কান্না আর বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আড়াইমারি তরমুজ পাম্প এলাকায় ঘটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। কুষ্টিয়া থেকে সিরাজগঞ্জগামী একটি নোহা মাইক্রোবাস (ঢাকা-মেট্রো-চ-১৬-৯৭৯২) একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মাইক্রোবাসচালকসহ আটজনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যান পাঁচজন। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
অসুস্থ এক রোগীকে দেখতে সাতজন যাত্রী নিয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছিল মাইক্রোবাসটি। ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজনসহ স্বজন রয়েছেন চারজন।
নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসচালকসহ ছয়জনের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে। অপর দুজনের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামে।
নিহতরা হলেন জাহিদুল ইসলাম ফরাজী (৫৮), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (৫২), বোন রোশনেয়ারা আক্তার ইতি (৪৮), চাচাতো বোন আয়োয়ারা বেগম (৫২), চাচাতো ভাবি আমেনা খাতুন আনু (৫০), মাইক্রোবাসচালক সাহাব হোসেন রুবেল (৩৫) এবং জাহিদুল ইসলামের শাশুড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাসিন্দা আঞ্জুমানয়ারা খাতুন (৭৪) ও শ্যালিকা সীমা খাতুন
এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা জানান, জাহিদুল ইসলাম ফরাজী দুই ছেলের বাবা। তার দুই ছেলে সোহান এবং সাগর সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সম্প্রতি তার প্রবাসী ছেলে সাগরের স্ত্রী নিশি খাতুনের পিত্তথলিতে পাথর অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অসুস্থ পুত্রবধূকে দেখতে যাওয়ার জন্য জাহিদুল ইসলাম একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন।
মাইক্রোবাসটি বুধবার সকালে জাহিদুল ইসলামের শাশুড়ি এবং শ্যালিকাকে গাংনী থেকে নিয়ে দৌলতপুরের ধর্মদহ গ্রামে আসে। পরে সিরাজগঞ্জের পথে রওয়ানা দেয়। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আড়াইমারি তরমুজ পাম্প এলাকায় মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসচালকসহ আটজনের মৃত্যু হয়।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা ধর্মদহ গ্রামে যেন শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের কান্না আর বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের গোটা পরিবেশ। স্বজনদের সঙ্গে শোকে বিহ্বল যেন গোটা গ্রাম। গ্রামজুড়ে কান্নার রোল। একসঙ্গে এতজনের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনসহ এলাকার মানুষ।
নিহত জাহিদুল ইসলামের আপন ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা নিহত হয়েছেন সবাই আমার স্বজন, রক্তের সম্পর্ক-আত্মীয়। মর্মান্তিক এই মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এই শোক কোনোভাবেই সহ্য করার মতো না।’
প্রতিবেশী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘এরকম ঘটনা আমাদের বয়সে আমরা কোনোদিন শুনিনি এবং দেখিনি। আজকে শুনলাম। সহ্য করার মতো ঘটনা না।’
স্বজনরা জানান, নিহত জাহিদুল ইসলামের দুই ছেলে সোহান ও সাগর বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে সিঙ্গাপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসবেন। তারা পৌঁছানোর পর জাহিদুল ইসলামসহ নিহতদের মরদেহ দাফন করার কথা রয়েছে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত মরদেহ গ্রামে পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ জানান, ময়নাতদন্তসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতেই মরদেহ গ্রামে পৌঁছে যাবে।










