13 July 2025 , 8:44:08 প্রিন্ট সংস্করণ
খালিদ হোসেন :
টানা ১৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সরকার গঠন করতে পারে তারা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একের পর এক অন্তর্ঘাতে রক্তাক্ত বিএনপি। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণসহ নানান ধরনের অপরাধের ঘটনায় ক্ষুব্ধ দলটির সাধারণ নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও আমজনতা।
গত জানুয়ারি থেকে জুন- ছয় মাসে ৫২৯টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে ৪৪৫টিই বিএনপির অন্তঃকোন্দল ও বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বলে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) ষাণ্মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত সোমবার (৭ জুলাই) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারি-জুন ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচআরএসএস।
সর্বশেষ গত বুধবার (৯ জুলাই) পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যা করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
সোহাগ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন রাজধানীর চকবাজার থানা যুবদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান মহিন ও একই থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অর্ধশতাধিক লোক এ হামলায় অংশ নেয়। এর মধ্যে রিয়াদ, সজীব, নান্নু, লম্বা মনির ও ছোট মনির— এই পাঁচজন মিলে সোহাগের মাথা থেঁতলে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা সবাই মহিনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূলহোতা মহিন, চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান রবিন ও মো. টিটন গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়া এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে দুই আসামি যুবদল নেতা মহিনের কর্মী লম্বা মনির ও মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী ছোট মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ নিয়ে মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা এখনো পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
সোহাগ হত্যার ভিডিও দেখে দেশ-বিদেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। এমনকি বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হত্যার প্রতিবাদে এরই মধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
সাবেক ছাত্রদল নেতা মামুন খান সরাসরি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের কমিটি ভেঙে না দিলে, আমরা গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় অভিমুখে মার্চ করব।’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস এবং বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যেই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, উল্লিখিত ঘটনাটির অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করুন। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও, বিচ্ছিন্ন ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনোদিন দেবেও না। এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স।
সোহাগ হত্যার ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অভিযুক্ত সদস্যদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় করা মামলার আসামি যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকিকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।





