সারা দেশ

কবরের মতো একটি কামরায় আমাকে ৬১ দিন রাখা হয় বললেন সালাহউদ্দিন

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আটক ও নির্যাতনের জন্য ব্যবহার হত ‘আয়নাঘর’। সেখানে ৬১ দিন বন্দি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘আয়না ঘরের’ রহস্য ভেদ হয়। সেই টর্চার সেল থেকে তিন বন্দি মুক্তিও পেয়েছেন।দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফেরা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তাকেও আয়না ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল টানা ৬১ দিন।

গত ১১ আগস্ট বিকালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে এবং অস্ত্রধারীরা মিলে উত্তরার একটি বাসা থেকে হাতকড়া পরিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গাটি ছিল কবরের মতো একটি কামরা। আমার মনে হয়েছিল এটি কোনো বাড়ির নিচ তলা হবে। কামরাটির আয়তন হবে ৫ ফিট বাই ১০ ফিট।

টয়লেটের জন্য জায়গাটাতে কোনোরকম একটা ব্যবস্থা ছিল। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কামরাটির বাইরে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালু থাকত এবং ছাদের সঙ্গে হাই পাওয়ার লাইট ছিল। এ ঘরটিতে আমাকে প্রায় ৬১ দিন রাখা হয়। এ সময়ে এক দিনের জন্যও বের করা হয়নি। সেখানকার অন্যান্য বিষয়ে আমি বলতে চাই না। কারণ যারা এসব করেছে তারা তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ইশারায় করেছে। আমি মনে করি এসব কাজের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কোথাও না কোথাও তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।

বিএনপির অন্যতম জৈষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘যেদিন আমাকে নিয়ে আসে সেদিন দুপুরে একইভাবে চোখে কালো কাপড় বেঁধে আনুমানিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘোরানো হয়। থামার পর আমার মনে হলো যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চোখে দেখতে না পারায় ঠিক বুঝতে পারিনি। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করল তারা। হয়তো তারা রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করছিল। এর পর কিছুদূর হাঁটিয়ে আবার কিছুদূর গাড়িতে করে একটা জায়গায় এনে আমাকে তোলা হয়। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছিল সেটা সীমান্তের কাছাকাছি কোনো জায়গা হবে। সেখানেও কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘এতসবের পর সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে আমাকে শিলংয়ে একটি মাটির ঘরে ফেলা হয়। পরে জানতে পারি জায়গাটির নাম গলফ লিংক। তখনো সূর্য ওঠেনি। অর্থাৎ তখনো সকাল হওয়ার বাকি ছিল। এরপর আমি পরিচয় দিয়ে সকালে ভ্রমণকারীদের কাছে পুলিশে খবর দেওয়ার অনুরোধ জানাই। এরপর পুলিশ এসে আমাকে হেফাজতে নেয়।সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ সময়ে আমাকে ঠিকঠাক মেডিসিন সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। ভালো পানি ও তিনবেলা খাবার দিয়েছে। এর বেশি তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৯ বছর পর রোববার ভারত থেকে দেশে ফেরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। আইনি ফাঁক ফোকর দেখিয়ে তাকে এতোদিন দেশে আসতে দেওয়া হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content