লাইফ স্টাইল

ডেঙ্গু চিকিৎসায় ডাবের পানি অপরিহার্য নয় বরং হিতে বিপরীতও হতে পারে

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ডেঙ্গুর প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে ডাবের বাজার। ডেঙ্গুর সরাসরি কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক না থাকায় চিকিৎসকরা রোগীকে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানোর প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করেন। এই তালিকায় রয়েছে ডাব, মাল্টা, কমলা, ডালিম ও বেদানা ফল। সেই সঙ্গে স্যুপসহ নানা পদের তরল খাবার তো আছেই। এর মধ্যে ডাবের প্রচলন সবচেয়ে বেশি।

সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম এলেই বাড়তে থাকে ডাবের দাম। তবে এবছরে ডাবের বাজার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত অস্থির। গাছওয়ালাদের কাছ থেকে ৪০/৫০ টাকায় ডাব কিনে কয়েক হাত ঘুরে সেই ডাব গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। বিশেষ করে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামনে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে দেখা যায় ডাবের এমন অস্বাভাবিক দাম। অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে ডাবের দাম।

এছাড়াও ডেঙ্গুর প্রতিষেধক হিসেবে ডাবের পানি একমাত্র উপলক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করাও ফলটির চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুনে।চিকিৎসকরা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবার দিতে বললেও সেটি যে শুধুমাত্র ডাবের পানিই হতে হবে- বিষয়টি এমন নয়। বরং মাত্রাতিরিক্ত ডাবের পানি পান ডেকে আনতে পারে বিপদ। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেছেন পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. মনিরুল ইসলাম।তিনি বলেন, ডাব যেমন ভালো পাশাপাশি এটির রয়েছে কিছু ক্ষতিকারক দিক। ডাবে রয়েছে অতিরিক্ত পটাশিয়াম, যা কিডনির রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

আমরা যেহেতু জানি না, কোন ডেঙ্গু রোগীর কিডনির অবস্থা কী রকম। তাই যেসকল রোগীর কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করেন, সেটি হবে ভয়াবহ। ডাবকে ডেঙ্গু চিকিৎসার প্রধান উপকরণ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ডাব ছাড়াও আরো অন্যান্য খাবার যেমন আনার, লাউ কিংবা মুলার মতো খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।এই পুষ্টিবিজ্ঞানী বলেন, অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে কারও কারও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে।

এ উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। আবার এটি রক্তচাপ কমিয়েও দিতে পারে। এ সবকিছুই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসার গাইডলাইনে রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খেতে বলা হয়েছে।

এর পরিমাণ দৈনিক ১০থেকে ১২ গ্লাস। তরল খাবারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে দুধ, ফলের রস, ওরস্যালাইন, বার্লি, ভাতের মাড় বা ডাবের পানির কথা।তিনি বলেন, ডাবের পানি শরীরের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত পান করলে ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। আর গাইডলাইনে কখনোই বলা হয়নি বেশি পরিমাণে ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। ঘাটতি পূরণে যে কোনো স্বাভাবিক পানীয় বা খাবার খাওয়া যায়। উদ্দেশ্য একটাই, রোগী যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে। তাহলে খুব বেশি পানের দরকার নেই।

%d bloggers like this: