জাতীয়

হুমায়ূন আহমেদ না থেকেও আছেন

হুমায়ূন আহমেদ না থেকেও আছেন

অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার। এই ২৪ দিনে মেলায় আসা বিভিন্ন লেখকের নতুন বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৯। অথচ এত বইয়ের ভিড়ে এখনও পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষে আছেন এক যুগ আগে কথাসাহিত্যের জাদুকর প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ। প্রকাশনীগুলোতে তাঁর লেখা বইয়ের বিক্রি এখনও আছে তালিকার শীর্ষে। লেখক ও প্রকাশকরা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদ দেশের সাহিত্যাঙ্গনে যে জায়গা সৃষ্টি করে গেছেন, তা এখনও কেউ পূরণ করতে পারেননি। পুরোনোরা তো বটেই, নতুন প্রজন্মের পাঠক এসে এখনও হুমায়ূনের বই খোঁজেন।

গতকাল অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে হুমায়ূন আহমেদের বই দেখছিলেন সুষমা আর সপ্তর্ষী। বড় বোন সুষমা পেশায় ব্যাংকার। তিনি জানান, ১২ বছর বয়স থেকেই তাঁর বই পড়ার অভ্যাস। ২০১০ সাল পর্যন্ত হুমায়ূনের লেখা সব বই পড়েছেন। ছোট বোন সপ্তর্ষী নতুন বই পড়া শুরু করেছেন। গত বছর মেলা থেকে ছোট বোনকে হুমায়ূনের চারটি বই কিনে দিয়েছেন। এবার কিনে দিয়েছেন ‘শঙ্খনীল কারাগার’ আর ‘নন্দিত নরকে’। একই স্টলের সামনে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মহিমা আক্তারের সঙ্গে। বাবা শাহজাদা মিন্টুর সঙ্গে মেলায় এসেছেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আনিসুল হকের বই পড়লেও মহিমার পছন্দের শীর্ষে হুমায়ূন।

এর মধ্যে মিসির আলী ও হিমু চরিত্রের কয়েকটি বই পড়া হয়েছে তাঁর।হুমায়ূনের পাঠকপ্রিয়তা প্রসঙ্গে অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও কোনো লেখকের সামগ্রিক বই বিক্রির সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। হুমায়ূন চেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে পাঠকরা যেন তাঁর বই কমপক্ষে দশ বছর পড়ে। হুমায়ূন চলে গেছেন এক যুগেরও বেশি সময় হলো। কিন্তু এখনও তাঁর বই সমানতালে পাঠকপ্রিয়। আগামী পঞ্চাশ বছরেও হুমায়ূনের এই পাঠকপ্রিয়তা থাকবে।হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ ১৯৭২ সালে প্রকাশ করে খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই প্রকাশনীই একে একে প্রকাশ করে তাঁর লেখা ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’সহ আটটি বই। এখন অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, অবসর, সময়, কাকলীসহ কয়েকটি প্রকাশনীতে হুমায়ূন আহমেদের বই পাওয়া যায়। তাঁর প্রায় সব বইয়ের এত বেশি সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে, যা যে কোনো লেখকের জন্য ঈর্ষণীয়। খান ব্রাদার্সের কর্মকর্তা তোতা মিয়া জানান, ১৯৭২ সালে হুমায়ূন প্রথম ‘নন্দিত নরকে’ বইটির পাণ্ডুলিপি নিয়ে যান মুক্তধারা প্রকাশনীতে। কিন্তু মুক্তধারা এ বই ছাপতে রাজি হয়নি। পরে আহমদ ছফা ওই পাণ্ডুলিপি নিয়ে আসেন খান ব্রাদার্সে। প্রকাশক প্রথম মুদ্রণের বই লেখকের বিক্রির নিশ্চয়তা নিয়ে ‘নন্দিত নরকে’ ছাপতে রাজি হন।

বইটি সে সময় তুমুল আলোচিত হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় বই ‘শঙ্খনীল কারাগার’ থেকে পরের আটটি বই ছাপতে তাদের আর অন্য কিছু ভাবতে হয়নি।প্রকাশনা সংস্থা অবসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ছোট একটি উপন্যাস ‘দেবী’ দিয়ে। গত বছরের জানুয়ারিতে বইটির ২২তম মুদ্রণ হয়েছে। অবসরের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, তারা হুমায়ূনের ‘আমি’ এবং উপন্যাস সমগ্রসহ বেশ কয়েকটি বই বের করেছেন। সব বই-ই প্রচুর বিক্রি হয়েছে। শুধু হুমায়ূন আহমেদের লেখা নয়, এই কথার জাদুকরকে নিয়ে প্রতিবছরই মেলায় একাধিক বই প্রকাশ করা হয়। এ বছর অন্যপ্রকাশ এনেছে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘কেমন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ’।

সময় প্রকাশন এনেছে ডা. এজাজুল ইসলামের ‘আমার হুমায়ূন স্যার’। স্মৃতিচারণামূলক দুটি বই-ই বেশ বিক্রি হচ্ছে।হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘যে লেখক মৃত্যুর পরও সমান জনপ্রিয় থাকেন এবং ধীরে ধীরে তা আরও বাড়তে থাকে, তাঁকেই আমি বড় লেখক বলি। আমাদের হুমায়ূন আহমেদ এমনই একজন লেখক; এখনও তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে।ডা. এজাজ বলেন, ‘হুমায়ূন স্যারের অসংখ্য নাটকে আমার অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে। স্যারের কাছাকাছি থাকার সুবাদে তাঁকে বহুমাত্রিকভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বইটিতে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

গতকাল ছিল মেলার শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ দিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় শিশু প্রহরের মধ্য দিয়ে। এ দিন নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। বিকেলে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মোহাম্মদ রফিক’ এবং ‘স্মরণ: খালেক বিন জয়েনউদদীন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক শাহনাজ পারভীন, কবি ও অনুবাদক সাইফুল ভূঁইয়া, কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন স্মৃতি এবং গবেষক মনিরুজ্জামান শাহীন।এদিকে তুহিন তৌহিদের ছড়ার বই ‘মনু গাঙের ধারা’ প্রকাশ করেছে সৌম্য প্রকাশনী। আজ রোববার থেকে ৩৫৪ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে। প্রচ্ছদ করেছেন ফাইয়াজ হোসেন। মূল্য ১৫০ টাকা।

আরও খবর

Sponsered content