সারা দেশ

বিক্রি হওয়া শিশুটি ফিরল মায়ের কোলে

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ‘দত্তকের নামে বিক্রি হওয়া’ এক নবজাতককে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। জন্মের দুই মাস ২০ দিন পর শনিবার রাতে ছেলে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে ধুনট থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান।দীর্ঘদিন পর সন্তানকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা আয়েশা খাতুন।

তিনি ধুনট সদর ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামের মৃত আশাদুল ইসলামের মেয়ে। বছর দেড়েক আগে সোহেল রানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সোহেল ঢাকায় তৈরি পোশাক কারাখানয় কাজ করেন।অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আয়েশা খাতুন উপজেলার বেলকুচি গ্রামে তার নানী আছিয়া বেগমের সঙ্গে বসবাস করতেন।ছেলেকে ফিরে পেতে ১৩ ফেব্রুয়ারি আয়েশা খাতুন বাদী হয়ে বেলকুচি গ্রামের বাসিন্দা ধুনট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহীনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন।

মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, বেলকুচি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম শাহীন এবং আয়েশার নানীর বাড়ি পাশাপাশি। আয়েশা তাকে নানা বলে সম্বোধন করে থাকেন। ২৮ নভেম্বর রফিকুল ইসলাম সন্তানসম্ভবা আয়েশাকে শেরপুর উপজেলার মাহবুব ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে সিজারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের সন্তান জন্ম দেন।কিন্তু জ্ঞান ফেরার আগেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে শিশুটিকে রফিকুল ও তার সহযোগীরা এক লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন বলে মামলায় অভিযোগ করেন আয়েশা।

যদিও আয়েশা বলেছেন, তিনি তখন ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।ছুদিন আগে রফিকুল ইসলাম শাহীনের ছোট ভাই রাজ্জাকুল হায়দার বিদ্যুতের স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা ফৌজিয়া বিথী বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি নবজাতককে নিয়ে আয়েশার বক্তব্যের একটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন।তখন বিষয়টি পুলিশসহ সবার নজরে আসে। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।

কিন্তু ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় ফৌজিয়া বিথীর শ্বশুর রমজান আলী এবং ভাসুর রফিকুল ইসলাম শাহীন ক্ষিপ্ত হন।শনিবার রমজান আলী ঘটনাটি নিয়ে বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম শাহীনের পক্ষে বগুড়া প্রেস ক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, “মিথ্যা ঘটনায় ছোট ছেলে বিদ্যুৎ ও তার বউ বিথী ষড়যন্ত্র করছে।”

পরে একই দিন ধুনট প্রেস ক্লাবে রাজ্জাকুল হায়দার বিদ্যুৎ, তার স্ত্রী ফৌজিয়া বিথী ও আয়েশা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।তখন রাজ্জাকুল হায়দার বিদ্যুৎ অভিযোগ করে বলেন, “বাবা সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে এবং বড় ভাই ১১ মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম শাহীনের অপকর্ম ঢাকতে আমার ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহীন বলেন, “আয়েশা স্বেচ্ছায় ছেলেকে দত্তক দিয়েছে। আমি মধ্যস্ততা করেছি। এখন তারা মিথ্যা কথা বলছে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধুনট থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধুনট থানার ওসি মো. সৈকত হাসান বলেন, “আপাতত শিশুটি মায়ের কাছে থাকলেও আদালতের মাধ্যমে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।“আমরা জানতে পেরেছি, এফিডেভিট মূলে বাচ্চাকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে ধুনট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখান থেকেই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।এ ছাড়া এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান ওসি।

শিশুটির মা আয়েশা খাতুন রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছি। সন্তানের অবস্থা ভালো না।“আমি আমার প্রতিবেশী নানা রফিকুল ইসলাম শাহীনের ফাঁদে পড়েছিলাম। আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। শুনেছি, শাহীন নানা এক লাখ টাকা নিয়েছে। সন্তান ফিরে পেয়েছি। এখন সন্তানকে বুকে রাখব। তবে শাহীন নানা প্রতারণা করেছে। এখন আমাকেও হুমকি, ভয় দেখাচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: