12 February 2024 , 1:19:26 প্রিন্ট সংস্করণ
অটিজম স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। এতে শিশু অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে এর প্রকাশ ঘটে। তবে যত দ্রুত এ সমস্যা শনাক্ত করা যায় ততই মঙ্গল। পরিবারের অন্যদের চেয়ে এ শিশুদের খাবারে যদি কিছুটা পরিবর্তন আনা যায় তবে তাদের উপসর্গগুলো থেকে যতটা সম্ভব ভালো রাখা যায়।
এদের খাবার ঠিক করার সময় দেখতে হবে, রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক আছে কি না। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের কোনো ঘাটতি আছে কি না। তাদের খাবার এমন হবে, যাতে থায়রয়েডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাদের খাবার হবে গ্লুটেন ও কেজিন ফ্রি এবং সহজ শর্করামুক্ত।
* গ্লুটেন ফ্রি খাবার : গ্লুটেন থাকে আটা, ময়দা, বার্লি, ইস্ট ও ভুট্টার মধ্যে। সুতরাং আটা-ময়দার তৈরি খাবার যেমন-রুটি, বিস্কুট, নুডলস, কেক, সুজি, সেমাই, পাস্তা, পাউরুটি, পিৎজা ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। তাহলে বাচ্চাদের কি ধরনের খাবার দিতে হবে এ প্রশ্ন অভিভাবকদের। তাদের দিতে হবে চাল ও ডালের তৈরি খাবার।
এ জন্য দিতে হবে-চালের রুটি, ভাত, খিচুড়ি, পিঠা, চালের সেমাই, ধানের খই, মুড়ি, চিড়া, চালের সুজি, পেঁয়াজু। এছাড়া দিতে হবে আলুর তৈরি খাবার। যেমন-ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুভর্তা, আলুর চপ, আলুর দম ইত্যাদি। প্রতি বেলায় তাদের ভাত দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। গ্লুটেন হলো-জটিল প্রোটিন। এর অন্য নাম প্রোলামিন। যাদের গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকে তাদের তলপেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুলকানি, মাথাব্যথা হতে পারে।
* কেজিন মুক্ত খাবার : কেজিন থাকে দুধের মধ্যে। এটি দুধের প্রধান প্রোটিন। এ কেজিনের জন্যই দুধ জমাট বেঁধে যায়। কেজিন মুক্ত খাবারের জন্য অটিজমের ক্ষেত্রে দুধ বাদ দিতে হয়। এতে শিশুদের মায়েরা বিপাকে পড়েন। কারণ দুধ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এ কারণে দুধ ছাড়া অন্যান্য ক্যালসিয়াম তাদের দিতে হবে। যেমন-সব রকমের ডাল, বাদাম, ছোটমাছ, পোস্তদানা, সমুদ্রের মাছ, শালগম, কালো কচুর শাক, সজনে পাতা, বাঁধাকপি, ব্রকলি, খেজুর, ডুমুর, ধনেপাতা, সীমের বিচি, মটরশুটি।
* সহজ শর্করা : শর্করা দুই রকম। জটিল শর্করা ও সহজ শর্করা। জটিল শর্করা হলো-ভাত-রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, আলু ইত্যাদি। সহজ শর্করা হলো-চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু, গ্লুকোজ ইত্যাদি। অটিজমের ক্ষেত্রে যাতে রক্তে শর্করা বেড়ে না যায় সে জন্য সহজ শর্করা বাদ দিতে হবে। এ জন্য চিনি ও গুড়ের তৈরি খাবার যেমন-মিষ্টি, হালুয়া, পুডিং, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, মিষ্টি পিঠা বাদ দিতে হবে।
যদি কোনো বাচ্চার হাইপোথায়রডিজম থাকে তাহলে তাদের খাবার থেকে মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকলি বাদ দিতে হবে। এদের খাবারে সামুদ্রিক মাছ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার দিলে ভালো হয়।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।