জাতীয়

৩১ বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন ১১ জনই উগান্ডার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদনের প্রথম সময়সীমা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। এ সময়ে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো থেকে তেমন সাড়াও পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত ৩১ বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১১ জনই উগান্ডার নাগরিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চার সদস্যের একটি ছোট দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই ও আইআরআইর পাঁচ সদস্যের দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।

এছাড়া ১৮ বিদেশি সাংবাদিক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদন চেয়েছেন। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের আবেদনের সময় ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ভারত, চীন, রাশিয়াসহ ৩৪টি দেশের নির্বাচন কমিশনারদেরও এ নির্বাচনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। তবে আমেরিকা ও পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।আরও জানা গেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি দেশীয় পর্যবেক্ষকদেরও সাড়া পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশীয় কোনো সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করেনি। কয়েকটি সংস্থা আবেদন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে।

তফশিল ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় নির্ধারিত রয়েছে। ওই সময় ২৫ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচন নিবন্ধিত ৬৭টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে। আরও ২৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব সংস্থার নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে। যদিও ইসির কর্মকর্তারা জানান, যেসব সংস্থা নিবন্ধন পাবে, সেগুলোকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদন করার জন্য পৃথক সময় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইসির নথিপত্রে দেখা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ জন বিদেশি এবং তাদের আওতায় ১১ বাংলাদেশি নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল। ওই নির্বাচনে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ ১১টি দেশের ৬২ বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিল। জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ ৫টি সংস্থার ১৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৯টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অতীত নির্বাচনের তুলনায় এবার বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদনে ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার এক প্রশ্নের উত্তরে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের তুলনায় ভালো সাড়া পেয়েছি। ব্যক্তি হিসাবে ও সংস্থা হিসাবে আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনেকে আসবে।

তিনি জানান, এখন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ১২টি দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও পর্যবেক্ষকের আবেদন পেয়েছি। সংস্থা হিসাবে চারটা সংস্থার আবেদন পেয়েছি। তারা আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার সম্মতি জানিয়েছে। সংখ্যা হিসাবে বিবেচনা করলে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২ জন হবে। তবে এ সংখ্যা সামনে বাড়তে পারে। অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এবার নির্বাচনে যে চারটি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে সেগুলোর মধ্যে আফ্রিকান ইলেকট্ররাল থেকে ১১ জন, সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফোরামের চারজন, এনডিআই ও আইআরআই’র ৫ জন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারজন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার কথা জানিয়েছেন।

ইসির তালিকায় দেখা গেছে, আফ্রিকান ইলেকট্ররাল থেকে যে ১১ জন পর্যবেক্ষণ করতে আসবেন তারা উগান্ডার নাগরিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারজন আইরিশ, স্লোভাক, ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ নাগরিক। বেশ কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি চেয়েছেন। পর্যবেক্ষক ছাড়াও এ নির্বাচনে ১৮ বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে আসার অনুমোদন চেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জনই ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা এএফপির সদস্য। ভারতের এনডিটিভি থেকে দুজন সাংবাদিক এদেশে আসার অনুমোদন চেয়েছেন। জানা গেছে, এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এনডিআই ও আইআরআই এবং কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন দল পাঠিয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে আগেই ইসিকে জানিয়েছে। তারা চার সদস্যের একটি ছোট দল পাঠাচ্ছে। এনডিআই ও আইআরআই প্রতিনিধিদল ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছিল। কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন দল বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে। তারা নির্বাচন পর্র্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা-তা পরে জানাবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ থাকে বিদেশিদের। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ৩৯টি দল অংশ নেয়।

ওই নির্বাচন ফ্রান্স, জাপান, স্পেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, আমেরিকা, জার্মান, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, কানাডা ও ব্রিটিশ হাইকমিশন পর্যবেক্ষণ করেছিল। এবার নির্বাচনে অন্তত ১৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। ওইসব দলের এ চিঠি দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। এর বাইরেও অনেক দল এককভাবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। যদিও বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দল নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে।

৩৪টি দেশের কমিশনকে আমন্ত্রণ : জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৪টি দেশের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি এসব দেশের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। চিঠিতে এসব দেশের নির্বাচন কমিশনারসহ তিনজনের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের খরচ নির্বাচন কমিশন বহন করবে। এ তালিকায় আমেরিকা ও পাকিস্তানের নাম নেই।

আমন্ত্রণ পাওয়া দেশগুলো হচ্ছে-ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল, থাইল্যান্ড, আজারবাইজান, মালয়েশিয়া, মরিশাস, তিউনিশিয়া, ব্রুনাই, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত এবং সৌদি আরব। এছাড়াও একক দেশ হিসাবে চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুরের নির্বাচন কমিশনারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

এছাড়া সার্ক ও ওআইসির মহাসচিব এবং ফেমবোসা ও এ-ওয়েব’র চেয়ারপারসনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, প্রত্যেক নির্বাচনে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেমবোসা, কমনওয়েলথ, ওআইসি এবং ডিকেআইভুক্ত দেশগুলোর ২০ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন।