25 September 2025 , 4:02:44 প্রিন্ট সংস্করণ
মাহমুদ শরীফ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আমন ধানে পোকার আক্রমণে অসহায় হয়ে পড়েছে চাষিরা। ধানক্ষেতে পোকার এই আক্রমণে বাড়তি খরচ কৃষকের চিন্তায় ফেলেছে। অন্যদিকে এবছরও সার-কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। এবার অতিবৃষ্টির কারণে সময় মত সব জমিতে রোপণেও অসুবিধা হয়েছিল। বৃষ্টি চলে যাওয়ায় অতিরিক্ত তাপ ও গরমে ধানে মাজরা, পাতা মোড়ানো, কারেন্ট, গান্ধিসহ নানা ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা দুই-তিনবার কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন করতে পারছেনা। যেন পোকার কাছে অসহায় হয়ে গেছে চাষীরা।
উপজেলার চাপড়া, যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়-কেউ ধানক্ষেতে কীটনাশক, কেউবা সার ছিটাচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত আগাছা পরিষ্কারে। ক্ষেতের বিভিন্ন অংশে ধান গাছ মরে ফাঁকা হয়ে গেছে। কোনো কোনো গাছের মাথা মরে লালচে হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতে ধান গাছ পঁচে যাচ্ছে।
উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা এলাকার কৃষক মিলন আলী এ বছর সাত বিঘা ১৩ কাটা জমিতে ধানী গোল্ড-৪৯ ও ৫১ জাতের আমন আবাদ করেছেন। গাছ সবুজ হওয়ার পরপরই মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। তিনি জানান, আগে দুইবার স্প্রে করে কাজ হয়েছে। এখন চারবারেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফসল উৎপাদন খরচ এবার আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
জোতমোড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান মোল্লা সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ইজারা, চাষ, চারা রোপণ ও পরিচর্যায় শ্রমিক খরচও বেড়েছে। সব মিলে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা; যা গতবারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি। গেল বছর বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ ফলন হয়েছিল। তবে এবছর আট থেকে দশ মনের বেশি হবেনা। যদুবয়রা গ্রামের কৃষক সোলেমান শেখ বলেন, একবার স্প্রে করতে চার-পাঁচ‘শ টাকা খরচ হচ্ছে। চারবার স্প্রে করা হয়েছে। আরও কয়েকবার লাগবে।
চাপড়া এলাকার কৃষক মোহাম্মদ লালু সার ও কীটনাশকের ব্যাপারে বলেন, এবার প্রতি বস্তা সার কিনতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি লেগেছে। ওষুধের বোতলেও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। তারপরেও আবার পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবছর চাষে আসল তোলায় মুসকিল হবে বলে তিনি আশঙকা করেছেন।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৪ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। জমির ইজারা, বীজ, সার, চাষ ও পরিচর্চা বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। হেক্টরে উৎপাদিত ধান থেকে এক দশমিক ৫ টন চাল উৎপাদন হয়।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমনে মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলেও তিনি আশংকা করেন।











