এক্সক্লুসিভ

কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ॥ বাড়ছে উৎকণ্ঠা

মাহমুদ শরীফ :

কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে পাল্টে যাচ্ছে জেলার মানচিত্র। বাড়ছে ভাঙন কবলিতদের উৎকন্ঠা। কুষ্টিয়া শহর-সংলগ্ন এলাকাসহ জেলার ভেড়ামারা, দৌলতপুর, মিরপুর, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন মাস আগের পর্যবেক্ষণে পদ্মা-গড়াইয়ের অন্তত আটটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ঠিক সে সব জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙন কবলিতরা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ না ফেললে ভাঙন আরও বাড়বে। ফসলি জমির পাশাপাশি বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যেতে পারে। সর্বস্ব হারানোর শংকায় দিনানিপাত করছেন তারা।

পাউবো সূত্র জানায়, গত এক মাস আগে ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি পদ্মা নদীতে আসায় এবার আগাম পানি বৃদ্ধি রয়েছে অব্যহত। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে জেলার পদ্মা-গড়াইয়ের ১৭টি এলাকা।

পাউবি সূত্র আরো জানায়, গত ২১ দিনে ৯ কিলোমিটার এলাকা ভেঙেছে। পাড় ভেঙে প্রায় ৫ মিটার করে ভেতরে প্রবেশ করেছে পদ্মা। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে আছে দৌলতপুর উপজেলার মরিচা, হাটখোলা, ঠোটারপাড়া ও উদয়নগর। ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর, মসলেমপুর, টিকটিকিপাড়া ও মুন্সীপাড়া এলাকা। এসব এলাকার ফসলি জমির ৩০ থেকে ৪০ হাত ভেতরে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এসময়ে পদ্মায় তিন মিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, পানি কমার সময় আরও ৫০ থেকে ৬০ মিটার এলাকার ভেতরে ভাঙন তৈরি হতে পারে। এতে ঝুঁকিতে আছে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর।

ভাঙন কবলিত ভেড়ামারা উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি বেশ উত্তাল। টিকটিকিপাড়া এলাকার ঠিক বিপরীত দিকে উত্তর-পশ্চিমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সেখানে দীর্ঘ বাঁধ থাকায় পানি বাধা পেয়ে ভেড়ামারার দিকে দিক পরিবর্তন হয়ে ধেয়ে আসছে। এতেই পাড় বেশি ভাঙছে। ইতিমধ্যে ফসলি জমি ভেঙে বিলীন হয়েছে বেশ কয়েক একর।

টিকটিকিপাড়ার বাসিন্দা দাউদ সরদার বলেন, গত ১০ দিনে দেখলাম ২০ থেকে ৩০ হাত এলাকা নিয়ে ফসলি জমি চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেল। সবচেয়ে বেশি ভাঙবে যখন পানি কমতে থাকবে। জানিনা তখন কী দেখতে হবে।

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ১০ থেকে ১২ দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দারা স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে নদীপাড়ে মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ দেখা যাচ্ছে না। ভাঙন থেমে নেই, আমরা অসহায় হয়ে শুধুই দেখছি।

এদিকে মুন্সীপাড়া থেকে মিরপুরের তালবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত ৯কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছে। মুন্সীপাড়ার যেখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে, তার কিছুটা উজানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন আরও ভেতরের দিকে বাঁক নিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এলাকাকে ঘিরে ফেলছে। আশঙ্কা করা যাচ্ছে, মুন্সীপাড়া এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ না ফেললে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

এদিকে পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গড়াই নদীর পানিও বেড়েছে। এতে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন মঙ্গলবাড়িয়া, রেনউইক, কমলাপুর, কুমারখালী উপজেলার কাশিমপুর, ভাঁড়োরা, কবুরহাট ও খোকসা উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাউবোর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, এবার উজানে ভারী বর্ষণ হয়েছে। তাতে আগাম পানি বেড়েছে পদ্মায়। ইতিমধ্যে ৯ কিলোমিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।