ধর্ম

আমি শুধু মুসলমানদের নই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদেরও বললেন উপদেষ্টা

নিজেকে সবার উপদেষ্টা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্যকে আমরা লালন করছি, আগামী দিনেও আমরা এটাকে লালন করে যাব। কোনো দুর্বৃত্ত যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করে সে যত শক্তিশালী হোক তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু মুসলমানদের উপদেষ্টা নই, আমি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদেরও উপদেষ্টা।

এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্যকে আমরা লালন করছি, আগামী দিনেও আমরা এটাকে লালন করে যাব। এ দেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। এ দেশের উন্নয়নে সবারই অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মানুষের অন্তরে এক ধরনের পাশবিক শক্তি কাজ করে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এই পাশবিক শক্তিকে দমন করতে হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, লোভ-লালসা মানবিক গুণাবলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষ-সেটাই বড় কথা। এই যে ধর্মীয় বিভাজন-আমি এক ধর্মের, আপনি এক ধর্মের, আরেকজন আরেক ধর্মের, এই যে বৈচিত্র্য এটাই হচ্ছে একটা সুন্দর সমাজের বহিঃপ্রকাশ।

ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা পূজা ও রোজা একইসঙ্গে পালন করেছি। গিরিশ চন্দ্র সেন পবিত্র কুরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন। আবার রামায়ণ ও মহাভারত বাংলায় অনুবাদে মুসলমানরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আমরা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে লালন করব এবং এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা উজ্জীবিত হব।

ড. খালিদ বলেন, ‘আমি বা আমার সরকার যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন এই বাংলার কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কিংবা অন্য কোনো নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গায়ে যদি আঘাত করা হয় তাহলে আমরা মনে করব সেটা আমার গায়ে আঘাত করা হয়েছে। সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বেহাত হওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দরজা সবার জন্য খোলা বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।

ড. খালিদ বলেন, যখন রাজনৈতিক পালাবদল হয় তখনই কিছু দুর্বৃত্ত, কিছু ডাকাত অন্যের সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ করে, দখল করে, লুট করে। এদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই। এরা দুর্বৃত্ত, এরা ক্রিমিনাল। এদের আমরা আইনের আওতায় এনে বিচার করব। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পাহারা জোরদার করার অনুরোধ জানান।

উপদেষ্টা জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানের ব্যয় সংকোচন করে সেই অর্থ বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায় দেয়ার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধন্যবাদ জানান। এছাড়া শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে বহুতল ভবন নির্মাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সবধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। একইসঙ্গে এই মন্দির থেকে অনাথ ও বিধবাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত সচিব কৃষ্ণেন্দু কুমার পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অশোক মাধব রায়, সাবেক সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, সাবেক সচিব তপন চন্দ্র মজুমদার ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন শ্রীমত কান্তি বন্ধু ব্রহ্মচারী। আলোচনা শেষে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের আত্মার মঙ্গল ও সুস্থতা কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।