ভিন্ন স্বাদের খবর

যে দ্বীপে পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই নারীরা যা খুশি করেন

যে দ্বীপে পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই নারীরা যা খুশি করেন

এ এক আশ্চর্য দ্বীপ আছে। নেই কোনো পুরুষ। ইচ্ছেমতো সেখানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে মেয়েরা। সবুজ-নীল বাল্টিক সাগরে সাঁতার কাটতে পারে কোনো চিন্তা ছাড়াই! নেই ধর্ষণ কিংবা যৌ নিপীড়ন। এমনকি পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মেয়েদের বিশেষ কোনো সাজগোজের যেমন প্রয়োজন নেই!

শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরই প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ঘোড়ায় চড়ে পুরো দ্বীপে দাপিয়ে বেড়াতে পারে মেয়েরা। নিবিড় অরণ্যে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় দিবা-রাত্রী। নারীরা এখানে নিতান্ত স্বল্প পোশাকে বা নামমাত্র আচ্ছাদনে শরীর ঢেকে অথবা চাইলে একেবারে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন। ইচ্ছে হলে দোলনায় দুলে দুলে সারাদিন বই পড়তে পারে। গলা খুলে গান গাইতে পারে।

ফিনল্যান্ড হল উত্তরপশ্চিম ইউরোপের বাল্টিক সাগরের উপকূলের এক দেশ। ঘন সবুজ অরণ্য আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য হ্রদ। দেশটির বনভূমি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলোকে ফিনল্যান্ডের ‘সবুজ সোনা’ নামে ডাকা হয়। হেলসিংকি হল ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

এই হেলসিংকিকে বলা হয় বাল্টিক সাগরের মুক্তা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাল্টিক সাগর। সেই সাগরের ঠান্ডা নীল-সবুজ জলরাশির উপকূলে রয়েছে সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। নাম তার ‘সুপার-শি’। বিপজ্জনক অথবা নিরীহ, সবরকম পুরুষেরই প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ।

সুপার-শি দ্বীপের মালিক একজন মার্কিন নারী। তার নাম ক্রিস্টিনা রথ। তিনি জানিয়েছেন, একবার ছুটি কাটাতে তিনি আমেরিকার একটি রিসোর্টে যান। সেখানে গিয়ে ভ্রমণকারীদের আচরণ ও ক্রিয়াকলাপ দেখে তার মনে হয়, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ ভ্রমণকারীদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক স্বাভাবিক নয়। অধিকাংশ পুরুষের চোখেই কাম ও লালসার ছায়া।

উল্টোদিকে নারীদের সমস্ত মনোযোগও পুরুষ সঙ্গীদের ওপরে।তখন থেকেই ক্রিস্টিনা ভেবেছেন, শুধু নারীদের জন্যই তিনি একটি দ্বীপ বানাবেন। ইউটোপিয়া নয়, সত্যি সত্যি এক বাস্তব দ্বীপ। যেখানে নারীরা সম্পূর্ণ নিজের মতো করে বাঁচবেন আর নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। কোনো পুরুষের উপর নির্ভর করতে হবে না তাদের। এইসময় তার সঙ্গে আলাপ হয় এক ফিনিশিয় যুবকের।

আলাপ গড়ায় প্রেমে।একবার সেই প্রেমিকের সঙ্গে তার স্বদেশভূমি দেখতে গিয়ে ফিনল্যান্ডের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন ক্রিস্টিনা। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আমেরিকায় নয়, স্বপ্নের রিসোর্টটি তিনি গড়ে তুলবেন তার প্রেমিকের মাতৃভূমি ফিনল্যান্ডেই।এরপরই তিনি কিনে ফেললেন আট দশমিক চার একরের একটি সমুদ্রবেষ্টিত মনোরম দ্বীপ। নাম রাখলেন ‘সুপার-শি’।

দ্বীপটিকে বিলাসবহুল অবসরযাপন কেন্দ্র হিসেবে রূপ দেবার জন্য তিনি বহু অর্থ ব্যয় করে কাজকর্ম শুরু করে দেন। ৮.৪ একরের এই দ্বীপ কিনতে ক্রিস্টিনা রথ তার একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে বিক্রি করে দেন ৬৫ মিলিয়ন ডলারে। সেই টাকা দিয়ে ২০১৭ সালে তিনি দ্বীপটি কিনে নেন। ২০১৮ সালের ২৩ জুন থেকে ভ্রমণপিপাসু নারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই দ্বীপ।

‘সুপার-শি’ দ্বীপে প্রথমে তৈরি হয়েছিল পাঁচ-ছয়টি বিলাসবহুল কেবিন। রথের লক্ষ্য দশ-বারোটি কেবিনের। এর পাশাপাশি এই দ্বীপে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ক্যাফে ও বিলাসবহুল হোটেল। এই দ্বীপে এক সপ্তাহ সময় কাটাতে খরচ হবে ৩৫০০ মার্কিন ডলার। তবে শুধু আর্থিক সামর্থ্য থাকাই যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে আপনার মধ্যে থাকতে হবে নতুন কিছু শেখার ও জানার আগ্রহ।

প্রথমে ভ্রমণপ্রার্থীকে অনলাইন আবেদন করতে হবে। তারপর সেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে রথ নিজে ভিডিও কল করে ইন্টারভিউ নেবেন এবং নির্বাচন করবেন পর্যটকদের। কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে সব তথ্য যাচাই করে প্রতিবার মাত্র ১০ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়।

ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, এই দ্বীপের পরিকল্পনার পেছনে কোনো পুরুষ-বিদ্বেষ নেই। ভবিষ্যতে নারীদের বিশেষ অতিথি হয়ে পুরুষেরাও হয়ত এই দ্বীপে পা রাখার অনুমতি পাবেন। তবে আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই। কোনো পুরুষ-সঙ্গী ছাড়া এই দুশ্চিন্তামুক্ত দ্বীপ-জীবন যে কোনো নারীকেই করে তুলবে আত্মবিশ্বাসী।